অনশনে থাকা অনেক পাটকলশ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন

আমরণ অনশনে থাকা পাটকলশ্রমিকদের অনেকে অসুস্থ হওয়ায় তাঁদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
আমরণ অনশনে থাকা পাটকলশ্রমিকদের অনেকে অসুস্থ হওয়ায় তাঁদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

‘যত লাগে লাশ নাও, তবু পাটকলশ্রমিকদের মজুরি কমিশন দাও’, ‘শ্রমিক কেন পুঁজিপতিদের চোখের বালি, মজুরি কমিশন চাইতে গেলে হয় সরকারের পকেট খালি’—এমন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলছে স্টার জুট মিলের প্যান্ডেলের এক পাশে। এর পাশেই ঝুলছে সারি সারি স্যালাইন। আমরণ অনশনে থাকা পাটকলশ্রমিকদের অনেকে অসুস্থ হওয়ায় তাঁদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।

খুলনা নগরের খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কে ঠান্ডার মধ্যে তাঁবু টানিয়ে প্যান্ডেল করে সেখানে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকেরা। ওই সড়কে অবস্থান নিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের নয়টির মধ্যে পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকেরা।

১১ দফা দাবিতে নিজ নিজ মিলের গেটের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা। গত রোববার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ওই কর্মসূচির আজ মঙ্গলবার ছিল তৃতীয় দিন। এরই মধ্যে অসুস্থ হওয়ায় খুলনা মেডিকেলসহ আশপাশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৫ জনের বেশি শ্রমিককে। অনশনস্থলে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, ক্ষুধা ও প্রচণ্ড শীতের মধ্যে একে একে শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল সোমবার রাত থেকে অসুস্থ হওয়া শ্রমিকদের স্যালাইন ও গুরুতর অসুস্থ শ্রমিকদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শ্রমিকই কমবেশি অসুস্থ বোধ করছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকনেতা খলিলুর রহমান বলেন, অনশনে খুলনায় থাকা পাটকলশ্রমিকদের মধ্যে ১৫ জনের বেশি শ্রমিককে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় ৫০ জনকে। সব মিলিয়ে শ্রমিকেরা যেভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাতে কয়েক দিনের মধ্যে বড় কোনো অঘটন ঘটতে পারে।

খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাবেক সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকেরা আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে যদি তাঁদের পরিবার ও অন্য শ্রমিকেরা বেঁচে যান, সে কারণেই তাঁরা অনশন করছেন।

শ্রমিকদের কয়েকজন এক জায়গায় হলেই ঘুরেফিরে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সাংসদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলেন, প্রথম দফা আন্দোলনের সময় প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ১৫ ডিসেম্বরের বৈঠক থেকে তাঁদের জন্য ভালো কোনো সংবাদ দিতে পারবেন। আর তা না হলে তিনিও ১৭ ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে অনশনে অংশ নেবেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী কোনো কথাই রাখেননি। ওই সময় আন্দোলন অব্যাহত থাকলে এত দিন ভালো কোনো ফল পাওয়া যেত বলে মনে করছেন তাঁরা।

মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটকলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থা বাতিল, পাট খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকেরা। ১১ দফা দাবি হলেও শ্রমিকদের এখন প্রধান দাবি পাট খাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা।

পাটকলশ্রমিকদের সমর্থনে আজ সকালে খুলনা নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খুলনা জেলা ও নগর ওয়ার্কার্স পার্টি। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পিকচার প্যালেস মোড়ে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকবান্ধব। তাঁর সময়েই বন্ধ মিল চালু হয়েছে। সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরছে না। শ্রমিকদের দাবি পূরণের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

দলটির নেতারা আরও বলেন, সরকার বৈশাখী ভাত দিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের একের পর এক সুযোগ বাড়াচ্ছে। আর শ্রমিকেরা না খেয়ে রাজপথে মরছেন। এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না। অবিলম্বে শ্রমিকদের ১১ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে মিল বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।