৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কর কর্মকর্তা আটক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফাঁদে আটকা পড়েছেন বগুড়া কর অঞ্চলের সহকারী কর কমিশনার অভিজিৎ কুমার দে। মঙ্গলবার দুপুরে দুদক বগুড়ার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল কর কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ঘুষের ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার সময় বগুড়া কর সার্কেল-১৪ এবং কর সার্কেল-১৫ (অতিরিক্ত দায়িত্ব)–এর সহকারী কর কমিশনারকে আটক করে। তাঁকে বগুড়া সদর থানায় রাখা হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ইউনুছ আলী নামের একজন ব্যবসায়ীর আয়কর ফাইল হালনাগাদ করতে অভিজিৎ কুমার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি দুদককে জানান ইউনুছ। পরে গতকাল কর কর্মকর্তার কার্যালয়ে টাকা লেনদেনের সময় অভিজিৎকে আটক করে। তিনি যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক অভিজিৎ কুমারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী বলেন, ২০ বছর ধরে নিয়মিত আয়কর প্রদান করে আসছেন। তিনি কর দেন বগুড়া কর সার্কেল-১৪ তে। সম্প্রতি তাঁর ছেলে জাকওয়ান ইসলাম নথি হালনাগাদ করতে গিয়ে দেখেন আগের নথিতে প্রদর্শিত কিছু জমি বিক্রি করার পরও ভুলক্রমে তা আয়কর ফাইল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি, জমি বিক্রির টাকাও প্রদর্শিত হয়নি। আবার কিছু কেনা জমিও সর্বশেষ নথিতে প্রদর্শিত হয়নি।

ইউনুছ আলী ২০১৮-১৯ সালের নথি হালনাগাদ ও সংশোধন করার জন্য বগুড়া কর অঞ্চল-১৪–এর কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমারের কাছে যান। এ সময় অভিজিৎ নথি হালনাগাদ করতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু ঘুষের টাকা দিতে ইউনুছ রাজি না হওয়ায় নানাভাবে হয়রানি করেন অভিজিৎ। তিনি ঘুষ ছাড়া নথি হালনাগাদ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং একাধিকবার নোটিশ জারি করেন।

বাধ্য হয়ে জাকওয়ান স্থানীয় দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুদক বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল অভিজিৎ কুমারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। আর ব্যবসায়ী ইউনুছ ও তাঁর ছেলে অভিজিৎ কুমারের কক্ষে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। ঠিক তখনই দুদকের কার্মকর্তারা ওই কক্ষে প্রবেশ করে ঘুষের টাকাসহ অভিজিৎকে আটক করেন।

মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আয়কর নথি হালনাগাদ করতে অভিজিৎ কুমার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ পেয়ে ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী এবং তাঁর ছেলে জাকওয়ান ইসলামকে নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। তাঁরা নথি হালনাগাদ করতে কর কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে সহকারী কর কমিশনার অভিজিৎ কুমারের হাতে ঘুষের টাকা তুলে দেন। কার্যালয়ের বাইরে থাকা দুদকের দল টাকাসহ অভিজিৎ কুমারকে হাতেনাতে আটক করে।

মনিরুজ্জামান বলেন, আটক অভিজিতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁকে আপাতত বগুড়া সদর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার তাঁকে বগুড়া জেলা জজ আদালতে হাজির করা হবে।

জানতে চাইলে বগুড়া কর অঞ্চলের কমিশনার স্বপন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী কর কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কমিশনারের নেই। দুদকের কাছে ঘুষের টাকাসহ আটকের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।