দেখা মিলছে শুভ্র হিমালয়ের

পঞ্চগড় থেকে দেখা মিলছে হিমালয়ের। সম্প্রতি সদর উপজেলার অমরখানা এলাকায়।  প্রথম আলো
পঞ্চগড় থেকে দেখা মিলছে হিমালয়ের। সম্প্রতি সদর উপজেলার অমরখানা এলাকায়। প্রথম আলো

হাত বাড়ালেই যেন শ্বেত-শুভ্র হিমালয়! আর একটু এগোলেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলা যাবে চোখ জুড়ানো বরফঢাকা পর্বতটাকে। হিমালয় মানেই এক বিস্ময়কর রহস্য, অভাবনীয় সৌন্দর্য। বিভাজনের কাঁটাতার পেরিয়ে যাঁদের পর্বতটাকে দেখার সৌভাগ্য হয় না, তাঁদের জন্য অনেকটা ‘রথ দেখা আর কলা বেচার’ সুবর্ণ সুযোগ এখন পঞ্চগড়ে।

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যাচ্ছে হিমালয় পর্বত। বিশেষ করে শরৎ, হেমন্ত আর শীতের মাঝামাঝি সময়ে মেঘমুক্ত আকাশে প্রায় প্রতিদিনই হিমালয়ের দেখা মিলছে।

গতকাল মঙ্গলবার এবং আগের দিন সোমবার তেঁতুলিয়া থেকে দেখা মিলছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতমালা হিমালয়ের। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সাদা রঙের এ পর্বতশৃঙ্গ। টানা কয়েক দিন ঘন কুয়াশার পর সোমবার মেঘমুক্ত স্বচ্ছ নীল আকাশের উত্তর প্রান্তে সোমবার দেখা মিলেছে এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের।

জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ডাকবাংলোতে দাঁড়িয়ে বা আর একটু এগিয়ে বাংলাবান্ধা গিয়ে উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালেই চোখে পড়ে হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য। এমনকি জেলা শহরের কোনো উঁচু দালানে উঠলেও দেখা মিলছে হিমালয়ের।

প্রতিবছর হিমালয় দর্শন অনেকটা সহজ হলেও এবার ছিল কিছুটা দুর্লভ। আকাশ পরিষ্কার না থাকায় আর কুয়াশা বেশি হওয়ায় এবার তেমন সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি হিমালয়। তবে কয়েক দিন ধরে দেখা মিলছে হিমালয়ের। কয়েক দিন ধরে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যাচ্ছে, সূর্যের বর্ণিল আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত এভারেস্ট শৃঙ্গ। তাই বিকেল হলেই ডাকবাংলো এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে চলা মহানন্দা নদীর তীরে বসছে প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডা। সন্ধ্যা নামার আগে মহানন্দাও হৃদয় কাড়ছে পর্যটকদের। বাংলার বুক চিরে যে সূর্য ওঠে ভোরে, সন্ধ্যায় আবার সেই সূর্য ডুব দেয় হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার আড়ালে।

দেশের সর্ব উত্তরের শীতপ্রবণ এই জেলা থেকে হিমালয় দেখতে পাওয়ায় দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পঞ্চগড়ের কদর বাড়ছে। রাজশাহী থেকে তেঁতুলিয়ায় হিমালয় দেখতে আসা কলেজছাত্র সামিন ইয়াসার বলেন, তেঁতুলিয়ায় এসে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়ায় ভ্যান পাওয়া যায়। এখানে এসে শিলিগুড়ি ব্রিজ, সমতলভূমির চা–বাগান এবং মহানন্দা নদী দেখলাম। এখানে সবচেয়ে ভালো লাগল মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে ওপারে হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে। দেশের মাটি থেকে এত সুস্পষ্ট কালো আর সাদা পাহাড় দেখে অবাক হয়েছেন তিনি।

দিলরুবা খানম নামের এক পর্যটক বলেন, ‘আমি অভিভূত, এভাবে নিজের দেশ থেকে হিমালয় দেখতে পেয়ে। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষেরই হিমালয় দেখতে একবার এই তেঁতুলিয়ায় আসা উচিত অন্তত এই সময়টাতে। এখানে পাসপোর্ট–ভিসা ছাড়াই হাতের কাছে হিমালয় দেখতে পাব আগে কখনো ভাবিনি।’