চাকরিতে স্বামীর ঠিকানা বাধ্যতামূলক কেন বেআইনি নয়: হাইকোর্ট

চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে নারী প্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে স্বামীর ঠিকানা উল্লেখ করা কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, মানবসম্পদ বিভাগ-১ এবং মহাব্যবস্থাপককে কেন দ্রুততার সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারী, বিশেষভাবে মানবসম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের লিঙ্গসমতা–বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পক্ষে মামলায় আবেদনকারী ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম। মামলা পরিচালনা করেন ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী আইনুননাহার সিদ্দিকা। তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী আয়েশা আক্তার।

গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বরে বলা হয়, ‘বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।’ ব্লাস্ট এ ধরনের লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যমূলক বিজ্ঞপ্তির জন্য হাইকোর্টে জনস্বার্থবিষয়ক মামলা দায়ের করে।

গত ৫ ডিসেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাই হবে স্ত্রীর ঠিকানা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯২৫ সালের দ্য ইন্ডিয়ান সাকসেশন অ্যাক্টের ১৬ নম্বরে বলা হয়েছে, বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর বাড়ি ওই নারী বা স্ত্রীর বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। এর ব্যতিক্রম হতে পারে। যেমন যথাযথ আদালতের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে অথবা কারাদণ্ডের লক্ষ্যে স্বামী যদি স্থানান্তরের জন্য থাকেন। সরকার এ আইন বহাল রেখেছে। আর ৯৪ বছর পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিধানই বহাল আছে।

চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের বিধান যুক্ত এবং তা বাধ্যতামূলক করায় এ পদে আবেদন করতে চাইছেন—এ ধরনের একাধিক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে তখন প্রথম আলোর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে বিজ্ঞপ্তি থেকে এ ধরনের বিধান বাদ দেয়, সে আহ্বানও জানিয়েছিলেন তাঁরা।

অন্যদিকে নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, ২০১৯ সালেও চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এই ধরনের বিধান থাকার মানে হচ্ছে নারীকে আবার পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া।

১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ প্রধান কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক পদের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের এ পদে আবেদন করতে হবে বলে উল্লেখ ছিল।