ভারতে চলমান অস্থিরতার শান্তিপূর্ণ সুরাহা হবে

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: সংগৃহীত
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারত দেশটির অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতার শান্তিপূর্ণ সুরাহা করবে, যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বাধাগ্রস্ত না হয়। এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বুধবার তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন। নতুন পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন পর তিনি আজ দুপুরে তাঁর দপ্তরে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ভারতে নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন জানতে চাইলে মাসুদ মোমেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ থাকে। কানাডা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক দেশের সঙ্গেই এমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আজ সকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। এখন পরিস্থিতি যেটা আছে আমরা তার ওপর নজর রাখছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেটা আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে আছে। বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ এবং সেটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, প্রাথমিকভাবে একটা অস্থিরতা ছিল। এখন তা আস্তে আস্তে কমে আসছে। আমরা আশা করি তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সুরাহা করবে যাতে দুই দেশের সহযোগিতার অন্য ক্ষেত্রগুলো আছে তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।’

গত দুই বছরের মতো ভবিষ্যতেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার থাকবে কী না জানতে চাইলে নতুন পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জের ধরন পাল্টাচ্ছে। এই ইস্যুতে আগে আমরা দ্বিপক্ষীয় পথে হেঁটেছি। এরপর বহুপক্ষীয় পথে হাঁটা শুরু করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এই ইস্যুতে জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য বিচারিক পথেও চলছি। অনেকেই একটিকে অন্যের চেয়ে আলাদা ভাবেন। আমরাতো মনে করি একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গারা যাতে সম্মান এবং নিরাপত্তার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের আবাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। কাজেই বিচারের বিষয়টি তাদের আস্থা স্থাপনের একটি উপায় বটে।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কালকেও যদি শুরু হয় (প্রত্যাবাসন) সেটা শেষ হতে অনেক বছর লাগবে। সুতরাং এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতি। কীভাবে আমরা তা সামাল দেব এটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা এটা শুরু করতে পারি।’

নতুন বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবে সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সচিব জানান, ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ২০২০ সালের করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এই বছরে অনেকগুলো উল্লেখ করার মতো অনুষ্ঠান যেমন মে বা জুন মাসে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন ছাড়াও বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আগামী ১৭ মার্চ জাতি জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী । বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশের মিশন রয়েছে সেখানে বছরব্যাপী একাধিক অনুষ্ঠান হবে। এই বিষয়গুলোকে আরও কীভাবে গতিশীল করা যায়, আলোচনায় তা মূল বিবেচ্য ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন নিয়ে আলোচনা হয়।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতো বিনিময়ের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় মাসুদ বিন মোমেনকে শুভেচ্ছা জানায় কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব।