সেতু হচ্ছে, তবে মেয়রের মিষ্টি নিয়ে প্রশ্ন

বিতরণ করা মিষ্টি শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমানের মুখে তুলে দিচ্ছেন এক গ্রামবাসী। ছবি: সংগৃহীত
বিতরণ করা মিষ্টি শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমানের মুখে তুলে দিচ্ছেন এক গ্রামবাসী। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন এলেই সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি আসত। কিন্তু এরপর আর কথা নেই। এভাবে দিনের পর দিন যায়। পাঁচ বছর আগে পৌর নির্বাচনের আগে বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার অর্জুনপুরের বাসিন্দারা এককাট্টা হয়েছিলেন, আগে সেতু পরে ভোট। এ নিয়ে প্রথম আলোতেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেই বহুকাঙ্ক্ষিত সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে কাল বৃহস্পতিবার। নতুন বছরে অর্জুনপুরের মানুষের কাছে এ এক মহা আনন্দের সংবাদ। সেতু নির্মাণকাজ শুরুর খবরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে আজ বুধবার ৭৫০ কেজি মিষ্টি বিতরণ করেছেন শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মেয়র তৌহিদুর রহমান।

৭২টি মিটার দৈর্ঘ্য, ৪ মিটার প্রস্থ সেতু নির্মাণে সাড়ে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সেতু নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দ থাকলেও মেয়রের এত মিষ্টি বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে আসছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মিষ্টি বিতরণের খবরে তিনিও বিব্রত। আজ বুধবার সন্ধ্যায় মিষ্টি বিতরণ নিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চাইলে এম এ মান্নান প্রথম আলোকে বললেন, ‘এত মিষ্টি বিতরণের কী আছে? এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কেন এটা উনি করতে গেলেন?’

শিবগঞ্জ পৌর সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অর্জুনপুর মহল্লা। অর্জনপুরের প্রায় চার হাজার মানুষকে নিত্যদিন বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সেই যাতায়াতের পথে এপার–ওপার অর্জনপুর-রাঙামাটিয়াকে আলাদা করেছে করতোয়া নদী। নদীর ওপর সেতু না থাকায় কেউ নৌকায় আবার কেউ অন্য পথে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। স্বাধীনতার পর থেকেই রাঙামাটিয়া ও অর্জুনপুরের মাঝে করতোয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। নদী পারাপারের সময় নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

অর্জুনপুরের গৃহবধূ রমিছা বেগম বলছিলেন, ‘বর্ষাকালত লৌকাত (নৌকা) চরে নদী পার হবার য্যায়া বুকটা ধরফর করে। ম্যালাবার লৌকা ডুবিচে। বিয়ানবেলা থ্যাকে লোকজন ওপারত বাজার করবার যায়, ছলপল স্কুল-কলেজত যায়। নদীত অ্যাকনা বিরিজ না থাকায় কত কষ্ট হচ্চিল। কত লেতা উলেকশনের আগে ওয়াদাও করিচে। কিন্তু বিরিজ আর হয়নি।’

তবে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের খবরে মেয়র তৌহিদুর রহমান টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী থেকে চমচম এনেছেন। টাঙ্গাইলে কেজিপ্রতি চমচম অন্তত ২০০ টাকা। সেই হিসাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি কিনেছেন মেয়র।

সেতুর নির্মাণ নিয়ে একজন জনপ্রতিনিধির এত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম। তিনি বলেন, দেড় লাখ টাকার মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। খরচ তো এখানেই শেষ নয়। কাল মন্ত্রী এলে এর জন্য খরচ আছে। মনে হয়, এত ব্যয়ের পেছনে মেয়রের কোনো বাণিজ্যের উদ্দেশ্য আছে। মনে হয়, সেতুর বরাদ্দ থেকে এসব টাকা আসবে। এমন বিলাসী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বন্ধ হোক।

তবে মেয়র তৌহিদের কথা, ‘এই সেতুর বরাদ্দের জন্য গত চার বছরে অর্ধশতবার ঢাকায় বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। তাই খুশিতে এই মিষ্টি বিতরণ। এতে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই।’