চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে লিতুন জিরা

শারীরিক প্রতিবন্ধিতা উপেক্ষা করেই সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে যশোরের লিতুন জিরা। ছবি: মাসুদ আলম
শারীরিক প্রতিবন্ধিতা উপেক্ষা করেই সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে যশোরের লিতুন জিরা। ছবি: মাসুদ আলম

জন্ম থেকেই দুই হাত-পা নেই। হাতের আঙুল দিয়ে তাই কখনো কলম ধরা হয়নি লিতুন জিরার (১০)। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধিতা এই অদম্য মেধাবীকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। হাতের বাহু দিয়ে চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট লিতুন। উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

বুধবার লিতুনদের বাড়িতে বসে কথা হয় তার মা জাহানারা বেগমের সঙ্গে। জাহানারা বলেন, ‘জন্ম থেকেই ওর দুই হাত-পা নেই। ওর জন্মের পর ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। অনেক কেঁদেছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারওর বোঝা হতে দেওয়া যাবে না। ছোটবেলায় ওকে টুলের সামনে বসিয়ে দেওয়া হতো। টুলের ওপর স্লেট রাখা হতো। হাতে দেওয়া হতো খড়িমাটি। খড়িমাটি ডান হাতের বাহুর মাথা দিয়ে ডান চোয়ালে চেপে ধরে নিচু হয়ে লিখত। এভাবে নিজে নিজেই লেখা শিখেছে লিতুন।’

প্রতিদিন হুইলচেয়ারে বসিয়ে মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেছেন মা জাহানারা বেগম। ছবি: মাসুদ আলম
প্রতিদিন হুইলচেয়ারে বসিয়ে মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেছেন মা জাহানারা বেগম। ছবি: মাসুদ আলম

লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ের হাতের লেখা সুন্দর। ভালো ছবিও আঁকে। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করতে পারে, গান গাইতে পারে। যত কষ্টই হোক ওকে আমি লেখাপড়া শেখাব।’

প্রতিদিন সকালে মা জাহানারা বেগম লিতুনকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন। আবার ছুটি হলে হুইলচেয়ারে করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। টিফিনের সময় দাদি স্কুলে গিয়ে খাবার খাইয়ে আসতেন। পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে তাই পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা জানাতে কার্পণ্য করেনি লিতুন। বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় সে, ‘পরীক্ষার ফলাফলে আমি খুব খুশি। আমার ইচ্ছা ভালো মানুষ হওয়ার। মা-বাবা ছাড়াও স্কুলের স্যার ও বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করেছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। লেখাপড়া শিখে আমি ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই।’

খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিতুন জিরা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে সে ৫৭১ নম্বর পেয়েছে। শুধু লেখাপড়ায় নয়, সে ভালো কবিতা আবৃত্তি করে। গান গাইতে এবং ভালো ছবিও আঁকতে পারে।’