'শিক্ষক হইতে ইচ্ছা করে'

হুইলচেয়ারে বসে নতুন বই দেখছে মফিজুল ইসলাম।  ছবি: প্রথম আলো
হুইলচেয়ারে বসে নতুন বই দেখছে মফিজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

‘আমি আপুর মতো পড়মু এহন। ইশকুলে যামু। শিক্ষক হইতে ইচ্ছা করে।’ নতুন বই হাতে হুইলচেয়ারে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের তাইজুল ইসলামের শিশুপুত্র মফিজুল ইসলাম।

নিজের হুইলচেয়ারে করে স্কুল থেকে মায়ের সঙ্গে সানন্দে বাড়ি ফিরেছে দুই পায়ের শক্তিহীন মফিজুল। সে এবার গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। নবম শ্রেণিপড়ুয়া বড় বোন তাসলিমা আক্তারের কাছে সে ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। বই পেয়ে তার স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছে জেনে মফিজুল বেশ খুশি। এই প্রতিবেদককে সে নিজের ইচ্ছায় স্বরবর্ণ, ইংরেজি বর্ণমালা বলে শোনাল। বারবার বলছিল, সে শিক্ষক হবে। বই নিয়ে বাড়ি ফেরার পর বারবার পাতা উল্টে নতুন নতুন সব ছবি দেখছিল বলে জানায় তার বড় বোন। এই প্রতিবেদককেও সে খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে দেখাচ্ছিল বইয়ের ভেতরের ছবি। মফিজুল বাড়ি ফিরে বারান্দায় হুইলচেয়ারে বসে বইয়ে পাওয়া এটা–ওটা নিয়ে বোনের কাছে জানতে চাইছিল বারবার।

তাসলিমার খুব ইচ্ছা, তার ভাই পড়াশোনা করুক। ভাইয়ের প্রতিবন্ধিতা যেন তার জীবনকে থামাতে না পারে, এমনটাই মনেপ্রাণে চাইছে তাসলিমা। ভাই সম্পর্কে সে জানায়, দুই পা বাঁকা ও শক্তিহীনতা নিয়েই তার জন্ম। হাঁটতে পারে না। জন্মের পর সে যখন একটু বুঝতে শিখল, তখন থেকেই তার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কৌতূহল দেখা যায়। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল ভাইকে পড়াশোনা করানোর। তাসলিমা আরও বলে, ‘সমাজে বিকলাঙ্গ হয়ে বাঁচা কঠিন। আমার ভাই বিকলাঙ্গতাকে যেন জয় করতে পারে, সে জন্য চেষ্টা করছি আমরা। তাই তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।’

মফিজুলের বাবা তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘বই পাওয়া যে কত আনন্দের, তা ছেলেকে দেখে বুঝলাম। নিজে পড়াশোনা করিনি। সন্তান যেন পড়াশোনা করে বড় হয়, সেটাই চাই।’ তিনি বলেন, ‘মফিজুল হাঁটতে পারে না। তার জন্মগত ত্রুটি। কিন্তু পড়াশোনায় খুব আগ্রহী সে। আমার সন্তান বই পেয়েই পড়তে বসে গেছে। খুব কৌতূহলী সে।’