গাছে বেঁধে নির্যাতন, লজ্জায় আত্মহত্যা

রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের হাতে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ওই নারীকে বেঁধে মারধর করা হয় এবং গতকাল বুধবার সকালে তিনি কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।

বড় বিহানালী ইউনিয়নের বাগান্না গ্রামের আক্তারুন নেছার (৩৮) মরদেহ গতকাল সকালে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ইউপির সদস্য আবদুল মজিদ ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলে আক্তারুনকে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান। তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে। 

গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখার কথা স্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মজিদ। তবে মারধর করেননি বলে দাবি করেন তিনি। তবে গৃহবধূর পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে ওই নারীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এই ক্ষোভে ও লজ্জায় তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আক্তারুনের সঙ্গে মজিদের বিরোধ বহুদিনের। সম্প্রতি তা আরও তিক্ত হয়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায় ফসল নষ্টের অভিযোগে ওই গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে রাতে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান গ্রাম পুলিশ সদস্যদের নিয়ে আক্তারুনকে উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে আক্তারুন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

গতকাল সকাল সাড়ে দশটার দিকে আক্তারুন স্থানীয় বাঘাবাড়ি বাজারের একটি দোকান থেকে কীটনাশক কিনে তা পান করেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন দ্রুত তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

আক্তারুনের ভাই সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা ছাড়াও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এই ক্ষোভ ও লজ্জায় তাঁর বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।

তবে ইউপি সদস্য আবদুল মজিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে আক্তারুন এক সপ্তাহ ধরে তাঁর খেতের পেঁয়াজ ও আলু নষ্ট করে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতেও তিনি ফসল নষ্ট করেছেন—এমন তথ্য পেয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে খেতের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তবে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর মামলা-মোকদ্দমা থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরেছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।