সড়ক দুর্ঘটনা কমলেও প্রাণহানি বাড়ছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত বছরে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও প্রাণহানি বেড়েছে। গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৬২৮ জন। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪ হাজার ৫৮০ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ৪৮ জনের।

এই তথ্য শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ)। সংগঠনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। গতকাল বুধবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানসংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ২১৯টি। এর আগের বছর সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩১৭। অর্থাৎ এক বছরে দুর্ঘটনা কমেছে ৯৮টি। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ৮ হাজার ৬১২ জন। আগের বছর আহত ছিল ১০ হাজার ৮২৮ জন। এক বছরের ব্যবধানে আহতের সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ২১৬। বিশেষজ্ঞ ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত হিসাব পাওয়া বেশ কঠিন। কারণ, ছোট এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার বেশির ভাগেরই মামলা হয় না। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে যায়। ফলে এই তথ্য পুলিশের কাছে থাকে না। অনেক সময় গণমাধ্যমেও এর খবর আসে না। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই হিসাবও গণমাধ্যমে আসে না।

সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে যাওয়ার পরও প্রাণহানি বাড়ার পেছনে মূল কারণ ছোট যানবাহন বলে মনে করে থাকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন মহাসড়কে দ্রুতগতির যানের সঙ্গে ধীরগতির যান চলাচল বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। দ্রুতগতির বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ছোট যানের যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। এ জন্য প্রাণহানিও বেড়ে যাচ্ছে।

পরিবহন খাত নিয়ে কাজ করা এসসিআরএফের জন্ম ২০০৭ সালে। প্রতিবেদনে এসসিআরএফ বলেছে, তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১২টি প্রধান কারণ বেরিয়ে এসেছে। এগুলো হচ্ছে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় চালকের মুঠোফোন কথা বলা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, বিরতি ছাড়াই দূরপাল্লার পথে একটানা যানবাহন চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে আইনের প্রয়োগে শিথিলতা, মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনের অবাধ চলাচল, বেহাল সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, নিয়োগপত্র না থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা, চালক ও সহকারীকে চুক্তিতে যান চালাতে দেওয়া, বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির কারণে শ্রমিক অসন্তোষ এবং পথচারীদের অসতর্কতা।

পুলিশের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্যের বিশ্লেষণ বলছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে কোনো না কোনোভাবে চালক দায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করেছে সরকার। আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে শাস্তি এবং বিভিন্ন অপরাধের দণ্ড ও জরিমানা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সরকার আইনের প্রয়োগে শিথিলতা দেখাচ্ছে।

এআরআইর পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহত হলেই আলোনায় আসে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বা প্রাণহানি নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। এরপরও যে সংখ্যা জানা যাচ্ছে তা খুবই পীড়াদায়ক। সড়ক নিরাপদ করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে, সড়ক ও যানবাহনের ত্রুটি সারাতে হবে, দক্ষ চালক গড়ে তুলতে হবে। এগুলো এমনি এমনি হয়ে যাবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে লাগাতার কাজ করতে হবে।