এই ইসির অধীনে হতে পারে এটাই বিএনপির শেষ ভোট

.
.

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ভালোভাবেই লড়তে চায়। ২০১৫ সালে ঢাকার নির্বাচনে দুপুরে ভোট বর্জন করলেও এবার শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে লড়তে চায় দেশের অন্যতম বড় এই রাজনৈতিক দল। সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি বারবার নিজেদের অনাস্থার কথা জানালেও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা। তবে ইসি এই নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ করতে না পারলে এটাই হতে পারে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ নেওয়া শেষ নির্বাচন। দলের উচ্চপর্যায়ে তেমন চিন্তাভাবনা রয়েছে।

গত কয়েক বছরে বিএনপি বেশ কিছু নির্বাচন বর্জন করেছে এবং অংশও নিয়েছে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সে বছরই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও শরিক দল অংশ নেয় এবং তাদের অনেক প্রার্থী জয়ী হয়। এরপর বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে সুবিধা করে পারেনি। এর জন্য অবশ্য তারা ভোট ডাকাতি, কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে আসছে।

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তারা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানায়। ভোটের ফলাফলও প্রত্যাখ্যান করে। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনেও দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি তারা। বিএনপি ও তার জোটের জয়ী প্রার্থীরা সংসদে অংশ নেবেন না বললেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া সবাই শপথ নিয়ে সাংসদ হন। মির্জা ফখরুলের বগুড়া-৬ আসন শূন্য হলে সে আসনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং জিতে যায়।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেন ও উত্তরে তাবিথ আউয়াল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বর্তমান সরকার ও ইসির প্রতি বিএনপির কোনো আস্থা নেই বলে বিভিন্ন সময়ে বলে আসছে। তবে নেতারা এও বলছেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, তাই তাঁরা নির্বাচন করছেন। সম্প্রতি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণ করতেই বিএনপি বারবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

এবারের ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও ইসি এ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে, সেটা দেখবে বিএনপি। বিএনপির এক নির্ভরশীল সূত্র জানায়, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ইসির ‘পারফরম্যান্স’–এর মূল্যায়ন করে এই ইসির অধীনে পরবর্তী সময়ে আর কোনো নির্বাচনে যাবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ বিষয় উঠে আসে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আগে বলা মুশকিল। এই নির্বাচনটা হোক। দেশের জনগণ আগে। তাদের ভাবনাকেই মূল্যায়ন করব পরবর্তী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ইসির ওপর কারোরই আস্থা নেই। তার পরও যাচ্ছি। এখন ভবিষ্যতে কী হবে না-হবে, সেটা তখনই বলা যাবে।’ পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘তা তো দেখতেই পাচ্ছেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলটির অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে ‘গা–ছাড়া’ ভাব ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে দলের মধ্যেই। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার সিদ্ধান্ত, কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, মামলা, ধরপাকড়সহ নানান কারণে স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল না। তবে ঢাকা সিটির নির্বাচনে ভালোভাবেই নামার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিএনপি ভালোভাবে নিয়ে এগোতে চায়। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও মির্জা আব্বাস দুপুরেই ভোট বর্জন করেন। তবে এবার দলটি শেষ পর্যন্ত দেখবে। হাল ছেড়ে দিতে চায় না। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত বড় সিটি নির্বাচনে প্রতিযোগিতা যদি না থাকে তাহলে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে জনগণের কাছে। আমরা নিজেরাই তা অনুভব করছি। যথেষ্ট হয়েছে, অনেক কিছুই আমরা হারিয়েছি। যেকোনো মূল্যে মাঠে এবং কেন্দ্রে থাকতেই হবে।’

উত্তরা পূর্ব থানার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক এস এ টুটুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল থেকে যেদিন বলা হয়েছে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা, সেদিন থেকেই এলাকায় অ্যাক্টিভলি কাজ শুরু করে দিয়েছি। নির্বাচন যেভাবে করতে হয়, সেভাবেই করব।’

শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পরিবেশ–পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করে।