বাগমারায় গাছে বেঁধে নির্যাতন: ইউপি সদস্য লাপাত্তা, একজন গ্রেপ্তার

.
.

রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের হাতে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল করিম (৫৬)। তিনি উপজেলার বাগান্না গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউপি সদস্য আবদুল মজিদের বড় ভাই। তবে ইউপি সদস্য মজিদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী সদর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন।

গত মঙ্গলবার রাতে খেতের ফসল নষ্টের অভিযোগে গৃহবধূ আক্তারুন নেছাকে (৩৮) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন ইউপি সদস্য। ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এই ঘটনায় ক্ষোভে ও লজ্জায় গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ।

গতকাল রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি ইউপি সদস্যের বড় ভাই আবদুল করিমকে গ্রেপ্তার করে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বলেন, মূল আসামি ইউপি সদস্য পলাতক। রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার আবদুল করিমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তিনি মামলারও আসামি।

এদিকে আজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নিহত গৃহবধূ আক্তারুন নেছার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

মামলার বাদী আক্তারুন নেছার ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ১০ বছর ধরে তাঁর বোন ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সাদ্দাম হোসেন ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আর মেয়ে শিখা খাতুন এবার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত বিরোধের কারণেই তাঁর বোনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ইউপি সদস্য আবদুল মজিদের বিরুদ্ধে তাঁর বোন প্রতারণার অভিযোগে মামলা করায় এর প্রতিশোধ নিতে পেটানো হয়েছে। এই লজ্জায় তিনি আত্মহত্যা করেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মজিদের খেতের ফসল নষ্টের অভিযোগে গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে গ্রাম পুলিশ সদস্য উদ্ধার করে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে পরের দিন তিনি আত্মহত্যা করেন।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার কথা স্বীকার করলেও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছিলেন। তবে এখন তাঁর মুঠোফোন বন্ধ।

বড়বিহানালী ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান বলেন, গৃহবধূ আক্তারুন নেছার সঙ্গে ইউপি সদস্যের মামলার বিষয়টি তিনিসহ এলাকার লোকজন জানেন। গৃহবধূ প্রতারণার অভিযোগে মজিদের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেছিলেন।