টাকা না দেওয়ায় পাঠ্যবই পায়নি ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী

বরিশাল
বরিশাল

সারা দেশে গতকাল বুধবার পাঠ্যবই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী আনন্দে বাড়ি ফিরেছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সেশন ফি পরিশোধ না করায় বরিশালের উজিরপুরের জয়শ্রী-মুন্ডপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে বই না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী-মুন্ডপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে নোটিশ দেওয়া হয়, ১ জানুয়ারি নতুন বই নিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সেশন ফি বাবদ ৫০০ টাকা করে নিয়ে আসতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, নোটিশের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী ৫০০ টাকা পরিশোধ করে নতুন বই নিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘোষণামতে, ৫০০ টাকা দিতে না পারায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে বই না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

নতুন বই পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা শ্রেণিশিক্ষকের কাছে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে স্লিপ নেয়। পরে সেই স্লিপ দেখিয়ে তারা বই সংগ্রহ করে। যারা টাকা দেয়নি, তাদের আর বই জোটেনি।

বই না পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ৫০০ টাকা করে দিতে না পারায় তারা নতুন বই পায়নি। সবাই নতুন বই নিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরেছে, কিন্তু তারা সেটা পারেনি।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, গত বছর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেকেন্দার আলী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম মাঝি বই দেওয়ার সময় প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে তিন লাখ টাকা আদায় করেন। এ বছর শিক্ষার্থীপ্রতি ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়। টাকা দিয়ে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী বই নিলেও সাত শতাধিক শিক্ষার্থী বই নিতে পারেনি। সারা দেশে বই উৎসব হলেও এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বছরের প্রথম দিনে বই না নিয়ে হতাশা হয়ে বাড়ি ফিরেছে। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতা করে সরকারের পাঠ্যবই উৎসব ব্যর্থ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুল থেকে বই ছাড়া ফিরে এসে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে স্কুলে গিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে নতুন বই এনে দিই।’

একই অভিযোগ করেন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, বুধবার টাকা দিতে না পারায় ছেলে বই পায়নি। পরে ৫০০ টাকা দিয়ে বই আনা হয়।

আইসক্রিম বিক্রেতা আতাহার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার মেয়ের বই আনার জন্য তাঁর স্ত্রী ৩০০ টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে বই দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মেয়েকে বই দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, বই নিতে চাইলে ৫০০ টাকাই লাগবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছি। তবে ৫০০ টাকার কম যারা দিয়েছে, তাদেরও বই দেওয়া হয়েছে। এ টাকা সেশন চার্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।’

৫০০ টাকা টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উজিরপুরের শিকারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বছরের শুরুতে সেশন চার্জ আদায়ের বিধান থাকায় সেশন চার্জ হিসেবে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায় করা টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হয়।

সেশন চার্জের বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল হক বলেন, ‘দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে বই পৌঁছে দেওয়া সরকারের বই উৎসব কর্মসূচি। এ কর্মসূচি ব্যাহত করে বই দেওয়ার সময় কোনো টাকা বা সেশন চার্জ নেওয়ার বিধান নেই। আমি বিষয়টি শুনেছি। কোনো ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’