রাজশাহীর কিশোরীটি বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না

সহপাঠীরা বই নিতে বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। সারা দিন সবাই আনন্দ, হইচই করেছে। অথচ এক ছাত্রী বাসায় থেকে শুধু কেঁদেছে। লজ্জায় কিশোরীটি বিদ্যালয়েই যেতে পারছে না। যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার শ্লীলতাহানির অভিযোগ, সেই শিক্ষক জামিনে ছাড়া পেয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছেন। এতে বিব্রত হয়ে ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।

ওই ছাত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষার্থী। সে এ বছর ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. দুরুল হুদা। গত বছরের ২০ অক্টোবর শিক্ষক দুরুল হুদার বিরুদ্ধে ওই মেয়ের মা বাদী হয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নগরের মতিহার থানায় মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিনই কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে ছাত্রীর বাসায় পড়াতে আসেন দুরুল হুদা। পড়া শেষে বাড়ি দেখার নাম করে ছাত্রীকে স্টোর রুমে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে দুরুল হুদা পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর ওই শিক্ষক জামিনে বেরিয়ে আসেন। বিধি মোতাবেক, কেউ গ্রেপ্তারের পর বা আত্মসমর্পণের পর জামিনে মুক্ত হলেও সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে এ ক্ষেত্রে জটিলতা এড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করবে।

জামিনের পর থেকে ওই শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন বলে ছাত্রীর মা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাওয়ায় লজ্জায় তাঁর মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। গত ২৪ ডিসেম্বর স্কুলে খাতা দেখতে যেতে পারেনি। এরপর ৩০ ডিসেম্বর ফল প্রকাশের দিনও সে যায়নি। এমনকি গতকাল বুধবার পাঠ্যবই উৎসবেও যায়নি। তাঁর অভিযোগ, আইন অনুযায়ী ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসার অধিকার রাখেন না। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

ওই স্কুলের অধ্যক্ষ শফিউল আলম বলেন, ওই শিক্ষক জামিনে বেরিয়ে এসে স্কুলে আসেন। তিনি তাঁদের বিভিন্ন মিটিংয়েও উপস্থিত থাকেন। তাঁরা লোকচক্ষুর কারণে তাঁকে কিছু বলতে পারেন না। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক কারাগারে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পরিচালককে অবহিত করে প্রয়োজনীয় নোট দিয়েছেন। কিন্তু গত দুই মাসেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলে সেই ফাইল পাঠাননি। এ অবস্থায় মেয়েটি স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং বিদ্যালয়টির সভাপতি আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলে পাঠিয়েছেন। এখনো লিগ্যাল সেল থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। যেকোনো ধরনের নির্দেশনা পেলে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক শাহিন জোহরা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন। কিন্তু এখনো রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে মামলার বিষয়ে কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাননি। চাকরির বিধান অনুযায়ী, কেউ ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক দুরুল হুদা দাবি করেন, যে অভিযোগে তিনি কারাভোগ করেছেন, সে ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো। সাময়িক বরখাস্তের কোনো নির্দেশনা ওই বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা আইনি প্রক্রিয়া। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। আপনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে পারেন।’