শখ থেকে স্বাবলম্বী

নিজ খামারে কোয়েল পাখিকে খাবার দিচ্ছেন আতিকুল। সম্প্রতি আদমদীঘিতে। ছবি: প্রথম আলো
নিজ খামারে কোয়েল পাখিকে খাবার দিচ্ছেন আতিকুল। সম্প্রতি আদমদীঘিতে। ছবি: প্রথম আলো

পড়াশোনার গণ্ডি অষ্টম শ্রেণিতে থেমে যায়। কৃষক পরিবারের সন্তান। সংসারে সাহায্য করতে খেতে নেমে পড়েন আতিকুল ইসলাম। পরে কিছুদিন মাছ চাষ করেন। কিন্তু খুব একটা লাভবান হতে পারছিলেন না। কোয়েল পাখি পালনে শখ ছিল তাঁর। সেই শখই ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠল।

কোয়েল পাখি পালন করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন আতিকুল। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেশরতা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আতিকুল প্রায় সাত বছর ধরে গ্রামে তাঁর নিজস্ব জায়গায় ‘মায়ের দোয়া কোয়েল ফার্ম’ নামের একটি খামার করে কোয়েল পাখি পালন করছেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় তিন হাজার কোয়েল পাখি আছে। খামারে এখন প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার কোয়েল পাখি ডিম দিচ্ছে এবং দেড় হাজার পাখি মাংসের জন্য পালন করা হচ্ছে।

বাড়ির পাশেই কোয়েল পাখির জন্য তিনি ওই খামার তৈরি করেছেন। আতিকুল এবং তাঁর পরিবারের লোকজন খামারের সবকিছু দেখাশোনা করেন। খামার থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ডিম বিক্রি হয় প্রায় দেড় হাজার। প্রতি শ ডিম বিক্রি হয় ২২০ টাকায়।

তিরিশোর্ধ্ব আতিকুল জানান, প্রায় সাত বছর আগে শখের বশে কোয়েল পালন শুরু করেন এবং এতে ব্যাপক সফলতা পান। বর্তমানে এই কোয়েল পাখি নিয়ে চলছে তাঁর বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রা। ভবিষ্যতে এই ব্যবসার আরও প্রসার ঘটাতে চান। এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একটি বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্রে (ইনকিউবিটর) বাচ্চা উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করব।’

আতিকুল জানান, একটি কোয়েল পাখি বছরে ১৫০ থেকে ২০০ ডিম দিয়ে থাকে। প্রতিটি ডিমের ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। বাচ্চা ফোটানোর পর দুই মাস বয়স হলেই এসব কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। এ ছাড়া কোয়েল পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় দিন দিন এই পাখির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তা ছাড়া মুরগির ডিম বা মাংসের চেয়ে কোয়েল পাখির ডিম-মাংসের দামেও বেশি পার্থক্য নেই।

আতিকুল কোয়েল পাখির খামার দিয়ে এলাকায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর খামারে উৎপাদিত কোয়েল পাখি ও ডিম দেখে এলাকার কিছু বেকার যুবক উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সহযোগিতা ছাড়াই আতিকুল বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। যদি আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করতেন, তাহলে খামারের পাখিদের ইনজেকশন দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতাম।’ তিনি জানান, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এ জন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোয়েল পাখি পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।