সেচযন্ত্র চলছে, জাতীয় গ্রিডেও যাচ্ছে বিদ্যুৎ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে সেচপাম্পের মাধ্যমে ফসল আবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি ঘর আলোকিত করতেও এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফসল উৎপাদনে ব্যবহারের পর যেটুকু বিদ্যুৎ থাকছে, সেটুকু চলে যাচ্ছে ঘর আলোকিত করতে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কালিনাথপুর গ্রামে মাঠে স্থাপিত বাংলাদেশ সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। ইউএনডিপির অর্থায়নে ও সোলার ই টেকনোলজির কারিগরি সহায়তায় সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে দেশের মধ্যে প্রথম পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একটি সৌরবিদ্যুৎ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কিলোওয়াট অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এত দিন সৌরবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শুধু সেচের কাজে ব্যবহৃত হতো। এখন সেচ বন্ধ থাকলেই উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে যাচ্ছে। এ পাইলট প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকা। পাইলট প্রকল্পটি সফলতা পেলে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রকৌশলী আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন,‘কালিনাথপুরে মোট পাঁচটি সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট করা হয়েছে। প্রতিটি প্ল্যান্টে গড়ে ১৯ থেকে ২৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এই বিদ্যুৎ দিয়ে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেচ দেওয়া হয়। বছরের তিন মৌসুমে এই সেচ চালু থাকে। শুধু বর্ষাকালের তিন মাসে পানি কম লাগে বা সেচ বন্ধ থাকে। এ সময় উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে। এর পরিমাণ প্রায় ৭৫ ইউনিট। তবে অন্য সময়ে বিদ্যুৎ সেচে ব্যবহারের পরও যদি বাড়তি থেকে যায়, সেটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় গ্রিডে চলে যাবে।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক হারুন-অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কালিনাথপুর সৌরবিদ্যুৎ থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ ওই এলাকার আশপাশের গ্রাহকেরা সুবিধা পাচ্ছেন।

গত ৮ নভেম্বর এ প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্রেডার চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন। এ সময় ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশনের (বিজিইএফ) প্রেসিডেন্ট দিপাল বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ইডকলের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ১০০ সৌরপাম্প সেচকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানির প্রয়োজন না থাকলেও সৌরশক্তির উৎপাদন অব্যবহৃত থাকে। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে স্রেডার নির্দেশনায় এই পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এতে সৌরবিদ্যুতের পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা যায়। এতে উভয় পক্ষই সুফল পায়। ধীরে ধীরে একটি পাম্পের আওতায় ৮০ বিঘা জমি সেচের আওতায় আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিনাথপুর মাঠের পাম্পমালিক তহির উদ্দিন বলেন, সৌরপাম্প থেকে সেচের জন্য তাঁরা পানি ব্যবহার করায় বিঘায় ৮০০ টাকা খরচ কম লাগছে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে এক বিঘা খেতে যেখানে পানি দিতে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হতো, এখন সেখানে সৌরবিদ্যুতে খরচ পড়ে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ যখন সব খরচের সঙ্গে সমন্বয় হবে, তখন এই খরচ আরও কমতে পারে।

এ বিষয়ে স্রেডার চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। বর্তমানে সৌর সেচ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে তিনটি ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষকের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অব্যবহৃত সৌরশক্তির বিকল্প ব্যবহার খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে শুধু সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকেই বাড়ানো হচ্ছে না, এর মাধ্যমে কৃষক এবং অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান—উভয়ের ওপর আর্থিক চাপ কমানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জন করা সম্ভব হবে।