ব্যক্তি ১০০, হিসাব ১০০, টাকাও ১০০ লাখ

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে হিসাব খোলার পর এক গ্রাহককে লাল গোলাপ উপহার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল এনআরবিসি ব্যাংক ভৈরব বাজার উপশাখায়।  ছবি: প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে হিসাব খোলার পর এক গ্রাহককে লাল গোলাপ উপহার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল এনআরবিসি ব্যাংক ভৈরব বাজার উপশাখায়। ছবি: প্রথম আলো

২০২০ সালের প্রথম কর্মদিবস। এনআরবিসি ব্যাংক ভৈরব বাজার উপশাখা। ওই শাখায় প্রথম কর্মদিবসে ১০০ জন ১০০টি নতুন হিসাব নম্বর খোলেন। ১০০ হিসাব নম্বরে জমা হয় ১০০ লাখ টাকা। উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ সংখ্যাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া।

১০০ জন, ১০০ হিসাব নম্বর ও ১০০ লাখ টাকা—ইস্যুটি ভৈরবের ব্যবসায়ী ও অন্য ব্যাংকে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ আলোচনার সৃষ্টি করে।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ২০২০ সালটি জাতির জন্য বিশেষ। কারণ, এই সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী জাতি বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করবে।

সূত্রটি জানায়, বঙ্গবন্ধুর দুটি ব্রত ছিল। একটি বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, অপরটি স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে অর্থনৈতিক মুক্তি। আজ দেশে ব্যাংকিং সেক্টরের প্রসার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকটি ইঙ্গিত করে, যা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। মূলত অর্থনৈতিক প্রবাহের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মরণ করতেই এই উদ্যোগ।

সূত্রটি জানায়, ১০০ সংখ্যা স্পর্শ করতে স্থানীয় লবণ ব্যবসায়ী সুব্রত সাহা সকালে প্রথম হিসাবটি খোলেন। ১০০ সংখ্যাটি স্পর্শ হয় অমৃত লাল দাস নামের এক ব্যবসায়ীর হিসাব খোলার মাধ্যমে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলী হোসেন ১০০ হিসাবের একজন। হিসাব খোলার পর তিনি বলেন, ‘এনআরবিসি ব্যাংক ভৈরব বাজার উপশাখা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে ১০০ হিসাব খোলা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, এমন তথ্য জানার পর মনে হয়েছে ১০০-এর একটি নম্বর আমার হতে হবে। সেই কারণে হিসাবটি খোলা।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এনআরবিসি ব্যাংক উপশাখায় গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বড় আকারের ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরের সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রবেশমাত্রই প্রত্যেক গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীর হাতে লাল গোলাপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জলখাবার হিসেবে মিষ্টি, মুড়ি ও চিড়ার মোয়া দেওয়া হচ্ছে।

আয়োজনটিতে বেশ উচ্ছ্বসিত ব্যাংকের কর্মীরা। তাঁদের অন্যতম কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘এই শাখায় কর্মরত থাকার কল্যাণে ভালো একটি কর্মদিবসের সাক্ষী হতে পেরেছি। বিষয়টি বেশ ভালো লাগার।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ উদ্যোগটির কথা জেনে দিনব্যাপী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও ব্যাংকে গিয়ে উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ফরহাদ আহমেদ, প্যানেল মেয়র আল আমিন, সংগীতজ্ঞ সোহরাব হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসু মিয়া, মো. আলী হোসেন, রঘুবীর সাহা, আনোয়ার হোসেন, শাহেদ আলী, মামুনুর রশিদ, ভৈরব শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।

ব্যতিক্রম এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা উপশাখার ইনচার্জ রকিবুল হাসান। তিনি বলেন, যেহেতু বঙ্গবন্ধুর বেশ কয়েকটি চাওয়ার মধ্যে একটি ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, সেই কারণে বঙ্গবন্ধুকে নামসর্বস্ব স্মরণের বিপরীতে নিজ নিজ সৃজনশীল এ রকম কর্মের মাধ্যমে যদি নবজাগরণ সৃষ্টি করা যায়, তবেই মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপন জাতির জীবনে সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে।