মানুষটি ফিরে আসার অপেক্ষায় ৫১ দিন

মঙ্গল ত্রিপুরার অপেক্ষায় স্ত্রী সান্ত্বনা। পাশেই মেয়ে দৃষ্টি ত্রিপুরা ও ছেলে কবাং ত্রিপুরা। ছবি: প্রথম আলো
মঙ্গল ত্রিপুরার অপেক্ষায় স্ত্রী সান্ত্বনা। পাশেই মেয়ে দৃষ্টি ত্রিপুরা ও ছেলে কবাং ত্রিপুরা। ছবি: প্রথম আলো

‘১৩ নভেম্বর ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়ে মানুষটি আর ফেরেনি। বেঁচে আছে কি না, তাও জানি না। মোবাইলটিও বন্ধ রয়েছে। মানুষটি ফিরে আসার আশায় ৫১ দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছি। জানি না ফিরে আসবে কি না? ছেলে-মেয়েরাও বাবার অপেক্ষায় কেঁদে কেঁদে দিন পার করছে।’—কথাগুলো বলছিলেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সুরেশ হেডম্যান পাড়া গ্রামের সান্ত্বনা ত্রিপুরা (৩৫)। তাঁর স্বামী মঙ্গল ত্রিপুরা (৫৫) ১৩ নভেম্বর ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। পরিবার ১৯ নভেম্বর থানায় নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করেছে।

উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সুরেশ হেডম্যান পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গল ত্রিপুরার অপেক্ষায় ঘরের দরজায় বসে আছেন সান্ত্বনা। পাশেই মেয়ে দৃষ্টি ত্রিপুরা ও ছেলে কবাং ত্রিপুরা।

সান্ত্বনা বলেন, ‘আমার স্বামী বাড়ি থেকে না বলে এভাবে কখনো চলে যায়নি। ১৩ তারিখ ঢাকার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর মোবাইল নম্বরও বন্ধ। এরপর থেকে নিখোঁজ। সে ঢাকা যায়নি, কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও যায়নি এটা নিশ্চিত হয়েছি। আমার স্বামী আঞ্চলিক কোনো সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিল না। দিনমজুরি আর চাষাবাদ করে সংসার চালাত।’

মেয়ে দৃষ্টি ত্রিপুরা বলে, ‘ বাবা আমাদের ছেড়ে কখনো এভাবে চলে যাবে না। যেখানেই যেত দিনে কয়েকবার কল করত। আমার বাবাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে। আমার বাবাকে ফেরত চাই।’

গ্রামের রণবালা ত্রিপুরা, বিউটি ত্রিপুরা ও মালিনী ত্রিপুরা জানান, মঙ্গল ত্রিপুরার সঙ্গে গ্রামের কারও শত্রুতা ছিল না। কোনো আঞ্চলিক সংগঠন করত বলেও তাঁদের জানা নেই। বিয়ের পর গত ১৭ বছর ধরে সুরেশ হেডম্যান পাড়া গ্রামেই বসবাস করছে। কোনো দিন কারও সঙ্গ ঝগড়া বিবাদও হয়নি। একটি মানুষ হঠাৎ কীভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল তাঁরাও ভাবতে পারছেন না।

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুরেশ হেডম্যান পাড়া গ্রামের মঙ্গল ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে বলে তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনা ত্রিপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা দেশের বিভিন্ন থানায় বেতারবার্তা পাঠিয়েছি। তাঁর কোনো এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’