'সাদা পাথর' মলিন না করার উদ্যোগ

‘সাদা পাথর’ পর্যটন এলাকা আবর্জনামুক্ত রাখতে সাঁটানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট, ৩ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
‘সাদা পাথর’ পর্যটন এলাকা আবর্জনামুক্ত রাখতে সাঁটানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট, ৩ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের নতুন পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ‘সাদা পাথর’ গন্তব্যে প্রতিদিন ২০টি পর্যটন বাস আর ১৫৫টি নৌকা চলাচল করে। এতে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। ছুটির দিন এই সংখ্যা হয় দ্বিগুণ। এর ফলে পর্যটকদের পদচারণের সঙ্গে দেখা দেয় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার প্রবণতা। এতে করে সাদা পাথর এলাকা মলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার ময়লা-আবর্জনা ফেলার ৩০টি স্থান নির্ধারণ করে সাঁটানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড।

সাদা পাথর মলিন না হওয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এ উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পর্যটনসংগঠনসহ এলাকাবাসীও একাত্ম হয়েছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্যের নেতৃত্বে বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘণ্টাখানেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হয়। শেষে ৩০টি স্থান নির্ধারণ করে সেখানে ড্রামের ডাস্টবিন ও সতর্কতামূলক দুটো স্টিলের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকায় সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, এপারে ধলাই নদের উৎসমুখের বিস্তৃত এলাকায় সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড়ের পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও আবুল লাইছ পাথর সংরক্ষণ করেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলাসোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামে একটি বাস সার্ভিস চালু করেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। যাতায়াত নির্বিঘ্ন হওয়ায় প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এর মধ্যে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিন ১০ হাজার পর্যটকের পদচারণ ঘটে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হওয়ায় পুরো এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জনপ্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য, সাদা পাথর এলাকায় চলাচলকারী নৌকার মাঝিদের নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। এরপর ৩০টি স্থান ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারণ করে সেখানে ড্রাম বসানো হয়। যত্রতত্র ময়লা না ফেলার নির্দেশিকা দিয়ে স্টিল দিয়ে নির্মিত দুটো সাইনবোর্ডও সাঁটানো হয়।

‘সাদা পাথর’ পর্যটন এলাকায় আবর্জনা ফেলতে ৩০টি স্থান নির্ধারণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসব স্থানে দেওয়া হয়েছে ডাস্টবিন। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট, ৩ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
‘সাদা পাথর’ পর্যটন এলাকায় আবর্জনা ফেলতে ৩০টি স্থান নির্ধারণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসব স্থানে দেওয়া হয়েছে ডাস্টবিন। কোম্পানীগঞ্জ, সিলেট, ৩ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কাজ পর্যটন এলাকায় অবস্থান করে সম্পন্ন করেন ইউএনও সুমন আচার্য। ডাস্টবিন ও সাইনবোর্ড সাঁটানোর কাজ শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সাদা পাথর নামের স্থানটি যেন দেখতে মলিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে পরিচ্ছন্নতার অভিযান শেষে সাইনবোর্ড ও ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সাদা পাথর মলিন না হওয়ায় ভূমিকা রাখবে আমাদের এ উদ্যোগ।’

কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের অন্যতম বড় পাথর কোয়ারি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে সাদা পাথরের স্তূপ ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র। প্রায় পাঁচ একর জায়গার ওপরে পাথরের অন্তত ১৩টি আস্তরণে অন্তত ২০ ফুট পুরু পাথরের স্তর জমেছে। স্থানটির অধিকাংশ পড়েছে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, সাদা পাথর হিসেবে পর্যটন আকর্ষণের স্থানটি ১৯৯০ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হয়ে সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ না করায় লুটপাট হয়েছিল। প্রায় দুই যুগের বেশি সময়ের পর ২০১৭ সালের বর্ষাকালে আবার পাথর জমা হওয়ায় স্থানীয় মানুষজন পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে নামেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে গোটা এলাকা।