গাইবান্ধায় দরপত্র ছাড়াই গাছ বিক্রি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের একটি সমিতির সভাপতি দরপত্র ছাড়া ১ হাজার ৭৬৫টি গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৩০০ গাছ কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গাছগুলো দোঘড়িয়া সমাজকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে রোপণ করা হয়েছিল। এর সভাপতি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সামছুল আবেদীন নামের একজনের কাছে ১৪ লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেছেন।

জানতে চাইলে রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ সরকার গতকাল বলেন, ‘দরপত্র ছাড়াই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

রাজাহার ইউপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় দোঘড়িয়া সমাজকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ১২-১৩ বছর আগে গোপালপুর সেতু থেকে বানেশ্বর সেতু, ধুতরবাড়ী সীমানা থেকে গোয়ালকান্দি, বানেশ্বর রাস্তা থেকে পলাশী সেতু, ধুতরবাড়ী মোড় নাওহাটা সেতু এবং পানিতলা রাস্তা থেকে নলডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ৭৬৫টি গাছ ছিল। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দরপত্র ছাড়াই গাছগুলো বিক্রি করেন। এ বিষয়ে এলাকায় মাইকিংও করা হয়নি। বিষয়টি সমিতির সদস্যদেরও জানানো হয়নি। গাছ ব্যবসায়ী সামছুল আবেদীন ১৪ লাখ টাকায় এগুলো কিনে নিয়েছেন।

সমিতির সদস্য বক্কর মিয়া বলেন, ‘সমিতির সভাপতি কীভাবে গাছগুলো বিক্রি করেছেন, তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে এলাকায় মাইকিং কিংবা প্রচার চালানো হয়নি। খবর পেয়ে এসে দেখি গাছ কাটা হচ্ছে। আমরা কিছু বলতে গেলে তিনি (সভাপতি) সমস্যায় ফেলবেন। সেই ভয়ে কিছু বলতে পারিনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, দুই দিন ধরে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ গাছ কাটা হয়েছে। সেগুলো রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এরপরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গাছকাটা চলছে।

জানতে চাইলে ক্রেতা সামছুল আবেদীন বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমাকে কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। সমিতির সভাপতি মৌখিকভাবে অনুমোদন নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। আপনার মতো গাছ কেটে নিয়ে যান।’

এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে গাছগুলো কাটার অনুমতি নিয়েছি।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ওই ইউনিয়নে গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

তবে উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অনুমতি নেওয়া হলেও দরপত্র বা নিলাম ডাকের মাধ্যমে গাছ কাটতে হবে। না হলে আইন লঙ্ঘিত হবে।