কুষ্টিয়া কলেজের হোস্টেলে পিস্তল নিয়ে হামলার অভিযোগ

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে পিস্তল নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে হোস্টেলের তিনজন আবাসিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বেলা আড়াইটার দিকে হোস্টেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে চারটায় হোস্টেল উপদেষ্টা কমিটির এক জরুরি সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জড়িত শিক্ষার্থীরা হলেন কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুবেল হোসেন, আশরাফুল ইসলাম ওরফে জয়, মানিকুজ্জামান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আতাউল হক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু রায়হান। তাঁদের মধ্যে রুবেল ও আতাউল হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র।

অভিযোগ উঠেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে হোস্টেলে হামলার ঘটনা ঘটে। জড়িত ছাত্ররা সবাই জয়নালের সঙ্গে চলাফেরা করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের সমন্বয়ে ডাইনিং পরিচালিত হয়। সেখানে রাফিউল ইসলাম নামের একজন আবাসিক ছাত্র ব্যবস্থাপক হিসেবে আছেন। গতকাল দুপুরে রুবেল ও আতাউলের কাছে ডিসেম্বর মাসের মাসিক খরচের টাকা চাইতে যান রাফিউল ইসলাম। এ সময় তাঁরা রাফিউলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একপর্যায়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। এ সময় রুবেল কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনকে ফোন করে হোস্টেলে ডেকে নেন। তাঁদের সঙ্গে আশরাফুল ইসলাম, মানিকুজ্জামান, আবু রায়হানসহ আরও কয়েকজন বহিরাগত সেখানে যান। এ সময় তাঁদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল ছিল। হোস্টেলে প্রবেশ করে তাঁরা সজল, বিপুল ও মুন নামে তিন ছাত্রকে মারধর করেন। পরে আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিপুল ও মুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সজলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় বিকেল চারটায় হোস্টেল উপদেষ্টা কমিটির জরুরি সভা হয়। কলেজ অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদিরের সভাপতিত্বে কমিটির আট সদস্যের উপস্থিতিতে সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো: হামলাকারীরা যদি আবাসিক হয়, তাঁদের আবাসিক সুবিধাসহ ছাত্রত্ব বাতিল, জড়িত অনাবাসিক ছাত্রদের ছাত্রত্ব বাতিল করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং হামলাকারী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা।

হামলার ঘটনায় পাঁচজন ছাত্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন হোস্টেল সুপার হাবিবুর রহমান। প্রত্যেক চিঠিতেই উল্লেখ করা হয়, বহিরাগত একদল সন্ত্রাসীকে সঙ্গে করে দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে ছাত্র হোস্টেলের ভেতর ঢুকে নিরীহ ছাত্রদের ওপর হামলা করে হোস্টেলের তথা কলেজের পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে। চিঠিতে ছাত্রত্ব কেন বাতিল করা হবে না, মর্মে তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি স্বপন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের সবাই কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী। অহেতুক তাঁদের মারা হয়েছে। জয়নাল ছাড়া হামলাকারীরা কেউ ছাত্রলীগের কেউ না। তবে তাঁরা জয়নালের সঙ্গে চলাফেলা করেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, আহত সজল বাদী হয়ে গতকাল রাতেই জয়নালসহ ছয়-সাতজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।