অসময়ে সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ

শীতের সময় সাধারণত এ দেশে ফ্লুর সংক্রমণ হয় না। তবে এ বছর দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত দুজনকে শনাক্ত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আক্রান্ত ব্যক্তিদের একজন মারা গেছেন।

এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সাংসদ ও যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন। সোয়াইন ফ্লু ও এইচ১এন১ ভাইরাসের সংক্রমণ একই।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়াত সাবেক সাংসদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এইচ১এন১ ভাইরাস শনাক্ত করেছিলাম। আরও বেশ কিছু পরীক্ষা হয়েছিল। অন্য কিছু পাওয়া যায়নি।’

তবে এই সময় আরও একজন ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক। ওই ব্যক্তি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

শীতের এই মৌসুমে সোয়াইন ফ্লু তথা এইচ১এন১ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কথা নয়। তাহলে এই দুই ব্যক্তির সংক্রমণের উৎস বা কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘দ্বিতীয় ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে। তিনি সম্প্রতি কোরিয়া ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেছেন। ধারণা করা যায়, সংক্রমণের ঘটনা দেশের বাইরেই ঘটেছে।’ তবে ফজিলাতুন নেসার সাম্প্রতিক বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘বিদেশ ফেরত বা বিদেশি কারও সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন কি না, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

২০০৯ সালে এইচ১এন১ ভাইরাস বা সোয়াইন ফ্লুর কথা প্রথম শোনা যায়। একসঙ্গে বেশ কিছু দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশ পেতে থাকে। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সোয়াইন ফ্লু মূলত শূকরের তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। শ্বাস-প্রশ্বাস, সরাসরি মিলন—এসবের মাধ্যমে ভাইরাস এক শূকর থেকে অন্য শূকরে সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাসে মানুষও আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৌসুমি ফ্লুর মতো মানুষের জ্বর হয়, তীব্র শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়া হতে পারে। দেখা গেছে, আক্রান্ত শূকরের সংস্পর্শে না এসেও মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে যখন ছড়ায়, তখন এর সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। এইচ১এন১ ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা আছে। আক্রান্তদের চিকিৎসায় ওষুধও আছে।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুটা দুশ্চিন্তার বিষয় বটে। কারণ, কোরিয়ায় এইচ১এন১ ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এটা শোনা যায়নি। দ্বিতীয়ত সাংসদের আক্রান্ত হওয়ার কারণও অজানা।’ এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন এই প্রবীণ চিকিৎসক।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, এ দেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ফ্লুর মৌসুম। অসময়ে রোগ দেখা দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এ দেশেই এই ভাইরাস আছে। সাধারণ জ্বরের মতোই এ রোগের লক্ষণ। এতে আতঙ্কিত হওয়ার বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জ্বর ভালো না হলে বা বিশেষ জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।