আক্রান্ত তিন লাখ ছাড়িয়েছে

সারা দেশে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা গত দুই মাসে তিন লাখ ছাড়িয়েছে। ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এসব রোগে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তবে ঝুঁকি বেশি শিশু ও বয়স্কদের।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট) ও ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৮৪৫ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর এই সংখ্যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ৮ গুণ বেশি। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার, যা আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে ৬ গুণ বেশি।

ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ার বিষয়ে কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এতদিন শীতপ্রবণ ২০ জেলার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। গত বছর থেকে ৬৪ জেলার তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আবার শীতও বেশি পড়ছে, বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন ও উন্নয়নমূলক কাজের কারণে বাতাসে ধুলাবালি, ধোঁয়া বাড়ছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

গত কয়েক দিনের হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন কমবেশি দুই হাজার মানুষ ডায়রিয়া ও এক হাজার মানুষ নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডিসেম্বরে শীত বেশি পড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা নভেম্বরে বেশি। এমনকি তিনটি বাদে সব মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে নভেম্বরে। তবে জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগী ডিসেম্বরেই বেশি এসেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ শফি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মধ্যে পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। হঠাৎ করে ঠান্ডা বেড়েছে। ফলে তারা ঠান্ডায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে নিতেও হয়তো সময় লেগেছে বেশি। এ কারণে মৃতের ঘটনাও বেশি ঘটেছে। আর এখন ধীরে ধীরে মানুষ ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এতে মৃত্যু কমে গেছে।

>

দিনে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে
ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্করা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত ও দূষণের কারণে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগী বেশি আসছে। এর পাশাপাশি চর্মরোগ ও চোখের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। যাত্রাবাড়ী থেকে দেড় বছরের লামিয়া আক্তারকে নিয়ে এসেছেন বাবা ও মা। শিশুটির নাক দিয়ে পানি ঝরছে। বুকের মধ্যে গড়গড় শব্দ। ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না। খেতে পারছে না। বহির্বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর শিশুটিকে ভর্তি করার ব্যবস্থা নেন।

আবার মিরপুর থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত চার বছরের শিশু মনির হোসেনকেও এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে যথাক্রমে ১৫৭ ও ২০২টি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি শিশু মারা গেলেও সে সংখ্যা জানা যায়নি।

ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্করা

গত দুই মাসে ঠান্ডাজনিত রোগে ৫১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে নভেম্বরেই মারা গেছে ৪৮ জন। এদের মধ্যে শিশু ১৭টি। শিশুরা সবাই নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। অন্যদের দুজন বাদে সবার বয়স ৬০ বছরের বেশি ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, শীতের সময়ে শিশুদের শরীরের তাপ দ্রুত কমে যায়। তাই ঠান্ডাজনিত রোগের ক্ষেত্রে শিশুরা নাজুক থাকে। কোনো শিশু ঘুমের সময় গোঙানির আওয়াজ হলে বা শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের খাঁচা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেবে গেলে বা বাচ্চা খেতে না পারলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সচেতনতামূলক কাজ হাতে নিয়েছে। তারা জেলায় জেলায় মাইকিং করছে। আগুন পোহাতে গিয়ে যেন কেউ দুর্ঘটনায় না পড়ে, সে জন্য সতর্ক থাকতে বলছে। সকালে ও বিকেলে শিশুদের ঘর থেকে বের না করার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। কাঁচা খেজুরের রস না খেতে বলা হচ্ছে।