ফরিদপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২০

ফরিদপুরের সদরপুরে আজ শনিবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের সদরপুরে আজ শনিবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের সদরপুরে আজ শনিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চার পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। 


শুরুতেই সদরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল ও সংঘর্ষের কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করতে পারেনি সদরপুর ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন নিয়ে আজ সকাল থেকেই থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকায় সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয় সকাল থেকেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টায় সদরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি এবং একই সময় সদরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে পৃথক দুটি মিছিল বের হয়। বর্তমান ছাত্রলীগ কমিটির নেতৃত্ব দেন সদরপুর আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফকির আবদুর ছত্তার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা। অপর পক্ষে নেতৃত্ব দেয় সদরপুর উপজেলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমানের সমর্থনপুষ্ট। কাজী শফিকুর রহমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থিত উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন মিছিলটি সদরপুর স্টেডিয়ামের ভেতরে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়। কৃষ্ণপুরের মোড় হয়ে সদরপুর কলেজের সামনে দিয়ে হাসপাতাল এলাকার দিকে এগোতে থাকে। ওই সময় কলেজ থেকে স্বতন্ত্র সাংসদ–সমর্থিত কলেজ ছাত্রলীগের মিছিলটি উপজেলা ছাত্রলীগের মিছিলের পাশাপাশি যেতে শুরু করে। এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ দুটি মিছিলের মধ্যে অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হওয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুটি মিছিল ফিরে এলে পুলিশ উপজেলা ছাত্রলীগের মিছিলটি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এবং কলেজ শাখার মিছিলটি কলেজের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

তবে পুলিশের কথা অগ্রাহ্য করে দুই মিছিলের লোকজন স্টেডিয়াম এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ওই সময় স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানের ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষ একে অপরের দিকে ইটের টুকরো ছুড়তে শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা এবং পরে শটগানের ২৩টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত চার পুলিশ সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ হোসেন, এসআই মো. কামরুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রবিউল ইসলাম ও কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন। অন্যদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্তার ফকির, যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন, বাপ্পি, জুয়েল হাওলাদার, শাওন আহমেদ প্রমুখ আছেন।

সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান বলেন, কাজী জাফর উল্লাহ গত ৩১ ডিসেম্বর থানা ও ইউএনও অফিস ঘেরাও করতে বলেন। এরই জের ধরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নাম করে অছাত্র দিয়ে শোভাযাত্রা এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণ চালানো হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। হাসপাতাল মোড় থেকে শোভাযাত্রাটি দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের লোকজন হামলা করে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে শটগানের ২৩টি ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। ইটের আঘাতে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। বিকেল পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।