কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রতারণা, অভিযোগে নারী আটক

কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে প্রতারণার অভিযোগে আটক করা হয় রানু বেগমকে। ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে প্রতারণার অভিযোগে আটক করা হয় রানু বেগমকে। ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে প্রতারণার অভিযোগে রানু বেগম (২৪) নামের এক তরুণীকে আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে কারা চত্বর থেকে তাঁকে আটক করেন কারারক্ষীরা।

রানু বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাসিমা আক্তার নামের এক নারীকে ফাঁদে ফেলে তাঁর চক্রের সদস্যদের দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আটক রানু জানিয়েছেন, তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকেন।

অভিযোগকারী নাসিমা আক্তার বলেন, সম্প্রতি তাঁর ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরকে সাভার থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হুমায়ুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রানু বেগম নামের এই তরুণী তাঁর কাছে কারাগারে আসার কারণ ও পরিচয় জানতে চায়। সব তথ্য জানার পর একপর্যায়ে রানু তাঁকে বলেন, ‘তিনি মুঠোফোন বাসায় রেখে এসেছেন, তাঁর একটু কথা বলতে হবে।’ তখন মুঠোফোন দিলে রানু এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন এবং ফোন ফেরত দিয়ে চলে যান।

নাসিমা আক্তার বলেন, এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে এক ব্যক্তি তাঁর মুঠোফোনে ফোন করে বলেন, ‘আপনার ভাই কারাগারে এক বন্দীর সঙ্গে মারামারি করে তাঁকে গুরুতর আহত করেছে। এখন আপনার ভাইকে জেলের লোকজন মারধর করবে। ভাইকে যদি রক্ষা করতে চান, তাহলে ০১৩১৭৪৯৬৪০৯ নম্বরে আপনাকে ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। টাকা না দিলে আপনার ভাইকে মারধর করে আরেকটি মামলায় জড়িয়ে অন্য জেলে পাঠিয়ে দেব।’

নাসিমা আক্তারের ভাষ্য, ওই ব্যক্তির কথামতো তিনি গতকাল শুক্রবার ওই বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠান এবং বাকি টাকা শনিবার পরিশোধের কথা বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি আরও পাঁচটি নম্বর থেকে বাকি ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য তাঁকে হুমকি দিতে থাকেন। তবে এখন টাকা নেই জানিয়ে তিনি ওই ব্যক্তিকে আবারও জানান, শনিবার কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে বাকি টাকা পরিশোধ করবেন।

নাসিমা বলেন, আজ সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে তিনি বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তখন কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারা কর্তৃপক্ষের কেউ তাঁর কাছে কোনো টাকাও দাবি করেনি। তিনি প্রতারকদের ফাঁদে পড়েছেন। এরপর কারারক্ষীরা কারাগারের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি করেন। একপর্যায়ে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় রানু বেগমকে আটক করে। পরে নাসিমা গিয়ে তাঁকে শনাক্ত করেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ইকবাল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, একটি প্রতারক চক্র কারাগার এলাকায় ঘোরাফেরা করে বন্দীদের স্বজনদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিভিন্নভাবে টাকা আদায় করে থাকে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দীর স্বজন নাসিমা আক্তারের দেওয়া তথ্যমতে রানু বেগম নামের প্রতারক চক্রের এক নারী সদস্যকে আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে রানু বেগমকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই কারা এলাকায় প্রতারণা ও অপকর্ম হতে দেওয়া যাবে না।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ওই নারীকে কারা কর্তৃপক্ষ থানায় সোপর্দ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে নাসিমা আক্তার বাদী হয়ে প্রতারণার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।