ভুয়া র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির কথা আদালতে স্বীকার

ভুয়া র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি আশিক পারভেজ ও মেহেদি হাসান। ছবি: সংগৃহীত
ভুয়া র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি আশিক পারভেজ ও মেহেদি হাসান। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ভুয়া সদস্য পরিচয়ে দিনেদুপুরে ডাকাতি করার কথা স্বীকার করে একজন আসামি ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরেকজন আসামিকে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শনিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত দুজনকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

দুই আসামি হলেন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার পালেরবাজার গ্রামের আশিক পারভেজ (২৪) এবং যশোরের ঝিকরগাছা থানার মিশ্রীদেয়ারা গ্রামের মেহেদি হাসান প্রকাশ ওরফে রকি (২৫)।

ভুয়া র‍্যাব সদস্যের পরিচয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় ২৮ ডিসেম্বর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে মাহমুদুল বলেন, ২৮ ডিসেম্বর সকাল নয়টার দিকে তিনি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে অনাবিল পরিবহন নামের একটি বাসে ওঠেন। বেলা ১১টার দিকে বাসটি যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার প্রধান সড়কের পদচারী–সেতুর নিচে আসে। তখন র‍্যাবের জ্যাকেট পরে তিন থেকে চারজন লোক বাসে ওঠে। নিজেদের র‍্যাব পরিচয় দিয়ে (পিস্তল হাতে ছিল) তাকে মারতে মারতে বাস থেকে নামান। তাঁর কাছে থাকা একটা আইফোন ৮প্লাস, একটি শাওমি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন এবং ব্যাগে থাকা তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাঁকে প্রাইভেটকারে ওঠায়। একজন তাঁর মুখ চেপে ধরে। তারপরও তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তখন রাস্তায় থাকা উবার চালক লিটন হাওলাদার তাঁর মোটরসাইকেল নিয়ে প্রাইভেটকারের সামনে ব্যারিকেড দেন। উবার চালক লিটন র‍্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করেন, কেন তাঁরা মুখ চেপে ধরেছেন। তখন মকবুল হোসেন নামের একজন পুলিশ কনস্টেবল সেখানে এগিয়ে আসেন। তখন তারা তাঁদের গাড়ি রাস্তায় ফেলে তাঁর টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কনস্টেবল মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া র‍্যাব সদস্যের পরিচয় দিয়ে সেদিন কয়েকজন মাহমুদুল হাসানের টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ভুয়া র‍্যাব পরিচয়ধারীদের গাড়ি আটকের ক্ষেত্রে উবার চালক লিটন হাওলাদারের ভূমিকা রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক মো. আল আমিন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া র‍্যাব পরিচয় দিয়ে চক্রটি অনেক দিন থেকে ছিনতাই-ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করার কথা জানা যাচ্ছে। সেদিন আশিক নামের আসামির একটা পরিচয়পত্র তাঁদের প্রাইভেটকারে ফেলে রেখে যায়। পাওয়া যায় র‍্যাবের নাম লেখা জ্যাকেট। পরিচয়পত্র ও গাড়ির কাগজপত্রের সূত্র ধরে আশিক ও মেহেদিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশিক কয়েকজনের নাম বলেছেন।

আল আমিন আরও বলেন, আসামি আশিক পারভেজ একসময় সাভার এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন। ২০১৫ সালে সেখানকার একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেই মামলাতেও আশিক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জামিনে বেরিয়ে আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আশিক বর্তমানে বেকার।

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া র‍্যাব পরিচয় দিয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আসামিদের মধ্যে মেহেদি হাসান ঢাকা কলেজের ছাত্র বলে জানা গেছে।

মামলার আলামত হিসেবে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার, র‍্যাবের নাম লেখা জ্যাকেট, দুটি বেতের লাঠি, দুটি পুরোনো গামছা, আশিকের পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে।