'উন্নয়নের' ভোগান্তিতে মানুষ

সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার চট্টগ্রাম নগরের স্ট্যান্ড রোড। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায়।  সৌরভ দাশ
সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার চট্টগ্রাম নগরের স্ট্যান্ড রোড। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায়। সৌরভ দাশ

কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত স্ট্যান্ড রোডের পাশে রয়েছে ৬টি জেটি ও ১৬টি ঘাট। আছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ভোগ্যপণ্যের গুদাম ও পোশাক কারখানা। এ সড়কে চলাচল করে শত শত ভারী যানবাহন। চলাচল হাজারো মানুষের। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কে ছয় মাস ধরে দুর্ভোগ লেগে আছে।

সড়কের দুটি পুরোনো কালভার্ট ভেঙে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আবার পানির পাইপ বসাতে চলছে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি। এসব কারণে লেগে আছে যানজট। শুষ্ক মৌসুমে ধুলার যন্ত্রণায় চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। আবার বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার হয়ে পড়েছে সড়ক। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, উন্নয়ন–যন্ত্রণায় ভুগছেন তাঁরা।

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহাল দশা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও চালকেরা ক্ষুব্ধ। মাসের পর মাস পার হলেও কাজের ধীরগতির কারণে যানজটসহ প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের দাবি, সেবা সংস্থার পাইপ স্থানান্তরসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে এখন নির্মাণকাজে কোনো সমস্যা নেই।

নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হওয়া এই সড়ক শেষ হয়েছে আগ্রাবাদের বারিক বিল্ডিং মোড়ে এসে। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত। এই সড়কে রয়েছে পদ্মা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়। আছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা। এই সড়কের পাশে রয়েছে ছয়টি জেটি এবং বাংলাবাজার, মাঝিরঘাটসহ ১৬টি ঘাট।

বিদেশ থেকে আসা পণ্যবাহী বড় জাহাজগুলো প্রথমে বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। এসব জাহাজের পণ্য লাইটার জাহাজে স্থানান্তর করা হয়। লাইটার জাহাজগুলোর পণ্য স্ট্যান্ড রোড এলাকার জেটি ও ঘাটে খালাস করা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পণ্য মাঝিরঘাটের বিভিন্ন গুদামে রাখা হয়। আর চট্টগ্রামের বাইরে পণ্য ঘাট থেকে গাড়ি করে সরাসরি নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়। পণ্য পরিবহনের কারণে এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও লরি চলাচল করে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্ট্যান্ড রোডের পুরোনো কাস্টমসের সামনের কালভার্টের দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রশস্ততা ৪০ ফুট। ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ের এই নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পেয়েছে মেসার্স সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স-মেসার্স এ টি কনস্ট্রাকশন (জেভি)। অন্য কালভার্টটির ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রশস্ততা ৪৫ ফুট। ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এটির কাজ করছে মেসার্স এ অ্যান্ড আর ট্রেডিং।

সড়কের পুরোনো কাস্টমস এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী মোহাম্মদ আমির হোসেন সেতুর নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেতু দুটির কারণে তাঁদের কষ্টের শেষ নেই। এর মধ্যে ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িও ছিল। এসব কারণে বাসা থেকে বের হওয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খলিল বলেন, পণ্য পরিবহনের জন্য এটি (স্ট্যান্ড রোড) নগরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু সেতুর নির্মাণকাজের কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। ফলে পণ্যবাহী গাড়ির জট লেগে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে তাঁরা কোথাও যেতে পারেন না। রোগীকে হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ অ্যান্ড আর ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ পেয়ার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কোনো গাফিলতি ছিল না। কালভার্টের নিচ থেকে পানি, গ্যাস ও ফোনের সংযোগ লাইন সরাতে কিছু সময় লেগেছে। আবার নকশারও জটিলতা ছিল। তা শেষ করে এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।  

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সদরঘাট থেকে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। পুরোনো কাস্টমস এলাকার কালভার্টের জন্য এক পাশ উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এই অংশে রাখা হয়েছে পানির পাইপ বসানোর নানা সরঞ্জাম। অন্য পাশেও চলছে কালভার্টের নির্মাণকাজ।

নির্মাণকাজে ধীরগতি ও নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিপ্লব দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার পাইপলাইন বসানো নিয়ে জটিলতা ছিল। অন্য সেবা সংস্থার পাইপগুলো স্থানান্তর করতে হয়েছে। আবার স্ট্যান্ড রোড খুবই ব্যস্ততম সড়ক। ফলে নির্মাণকাজ শুরু করতে বেগ পেতে হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ হবে।