লক্ষ্মীপুরে ৩২ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের ২২টি শূন্য

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৩২ জন বিশেষজ্ঞ (কনসালট্যান্ট) চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি পদই শূন্য। চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এ পদগুলোতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এতে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, শিশু, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। 

গত ২৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকাসংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এর আগেও বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পদই শূন্য। এ ছাড়া রামগতিতে ৪টি পদের মধ্যে ৪টিই শূন্য। কমলনগরে ৪টি, রামগঞ্জে ৩টি ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর জেলায় অর্ধশতাধিক নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দেননি।

রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তিনি গত ২৯ ডিসেম্বর রামগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও মেডিসিনের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাননি। পরে জানতে পারেন মেডিসিনের কোনো চিকিৎসক নেই।

গত ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, গাইনি, শিশু, চর্ম ও সার্জারির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর জন্য কমপক্ষে ২৮ জন রোগী ভিড় করেছেন। চিকিৎসক না পেয়ে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে তাঁরা চলে যান।

রায়পুর উপজেলার চর মোহনা গ্রামের মো. আসাদ মিয়া জানান, এক মাস ধরে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গত ৩০ ডিসেম্বর রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যান। ৫০০ টাকা ফি দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখানোর মতো সংগতি তাঁর নেই।

কমলনগর উপজেলা থেকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ কর্মরত রয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বর ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৩০টি রোগীকে চিকিৎসা দেন। এর আগের দিন চিকিৎসা দেন ৩৫টি শিশুকে। 

কমলনগরের চর লরেঞ্জ এলাকার কৃষক আবুল কালাম জানান, তাঁর ছেলে মো. স্বপন (৬) প্রচণ্ড শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেলে সুস্থ হয়।

রামগতি উপজেলার চর আলগি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না
থাকায় এলাকার লোকজনকে ৬০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর অথবা ৪০ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালীতে যেতে হচ্ছে। কিন্তু উপকূলীয় দরিদ্র এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তাঁরা হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজের শরণাপন্ন হন।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মো. আবদুল গফ্ফার বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। খুব শিগগির সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সারা দেশেই এমন সংকট রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে হয়তো একটু বেশি।