কৃষিজমিতে পুকুর খনন, জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

বিলের কৃষিজমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এতে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বাদইল বড় বিলে।  ছবি: শহীদুল ইসলাম
বিলের কৃষিজমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এতে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বাদইল বড় বিলে। ছবি: শহীদুল ইসলাম

নিয়ম না মেনে রাজশাহীর দুর্গাপুরের বড়ইল ও বাদইল বিলে কৃষিজমিতে কয়েকজন মাছচাষির বিরুদ্ধে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষকেরা জমি হারানো ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় আছেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সাংসদের সম্মতিতে পুকুরগুলো খনন করা হচ্ছে। তবে সাংসদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় ২০টি খননযন্ত্র দিয়ে দিনে ও রাতে পুকুরগুলো করা হচ্ছে। এভাবে পুকুর খনন করা হলে তাঁদের প্রায় এক হাজার বিঘা তিন ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে গেলে বর্ষায় আশপাশের বাড়িঘরেও পানি উঠবে। এ ছাড়া পুকুর খননকারীরা নিজেদের জমির পাশের জমিও দখলে নিয়ে নিচ্ছেন।

অভিযোগকারীরা জানান, পুকুর খননকারীরা এলাকায় প্রভাবশালী মৎস্যচাষি। তাঁরা হলেন উপজেলার বড়ইল গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, এনতাজ আলী ও উজানখলসী গ্রামের আবদুল মজিদ।

গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর উপজেলার বড়ইল ও বাদইল বিলে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বিলেই যেন পুকুর খননের মহোৎসব শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ছয়টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। বেলা একটার দিকে দুটি পুকুরে প্রায় ১০টি খননযন্ত্র দিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। পাশেই আরেকটি জায়গায় নতুন করে পুকুর খননের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কাছের একটি কলাবাগানের মধ্যে দুটি খননযন্ত্র রেখে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, এগুলো দিয়ে রাতে অন্যের জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। যাঁদের জমিতে খনন করা হচ্ছে, তাঁদেরও অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না।

বাদইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মো. আল হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, দুটি বিলে তাঁর প্রায় ৩১ বিঘা জমি আছে। এরই মধ্যে ৬৯ শতাংশ জমি পুকুরের মধ্যে চলে গেছে। অনাবাদি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে আরও তিন বিঘা জমিতে।

বাদইল গ্রামের আসাদুল মণ্ডল তাঁর জমিতে পুকুর খননের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিলে ছুটে এসেছিলেন। তিনি বলেন, জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে, অথচ তিনি আগে কিছুই জানতেন না। তাঁর জমি কেনা হবে কি না, সে তথ্যও জানাননি কেউ।

একই অবস্থা দুর্গাপুর উপজেলার উজানখলসী গ্রামের স্কুলশিক্ষক মতিউর রহমানের। বৃহস্পতিবার দুপুরে বড়ইল বিলে এসে তিনি বলেন, যাঁরা পুকুর কাটছেন তাঁরা তাঁকে বলেছেন, জমি কেটে পুকুর করা হবে। এ সময় ৮ শতাংশ জমি পুকুর খননকারীরা দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন বাদইল গ্রামের কৃষক কফিল শাহ।

বড়ইল বিলেই পুকুর খননকারী এনতাজ আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতিবছর ৩০ হাজার টাকা বিঘা হিসাবে ১০ বছরের জন্য জমি নিয়ে পুকুর খনন করছেন। ১০ বছর পরে তাঁদের সঙ্গে নতুন চুক্তি হবে। জোর করে জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন এনতাজ।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে শুক্রবার আরেক পুকুর খননকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, নিজের ১৫ বিঘা জমিতেই পুকুর খনন করছেন তিনি। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা মিথ্যা বলেছেন। খননের মাধ্যমে ভূমির শ্রেণির পরিবর্তনের জন্য কারও অনুমোদন পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে কথা বলে তিনি পুকুর খনন করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ মনসুর রহমান বলেন, তিনি নিজেই পুকুর খননের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে অপর পুকুর খননকারী আবদুল মজিদ কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি বলেছেন, ২০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধা বলেন, এর আগেও অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করা হয়েছে। কারণ, যত্রতত্র পুকুর কাটার কারণে মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে কেউ দুর্গাপুরে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করতে পারবেন না।