সাংসদের বিরুদ্ধে লেখালেখি অভিযোগে আ.লীগ নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সাংসদ আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ও ভিত্তিহীন লেখালেখির অভিযোগে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি হয়।

গতকাল শনিবার দুপুরে মামলাটি করেন উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাবুল মিয়া। মামলায় আবুল কাসেম, আ. মান্নান স্বপন, মোজাম্মেল হক ও আশরাফুল হককে আসামি করা হয়েছে।

এই চারজনের মধ্যে মোজাম্মেল ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ সৌদি আরব শাখার সভাপতি। আশরাফুল হক বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আ. মান্নান স্বপন হলেন আ. মান্নান স্বপন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। তিনি ‘ধমনি’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকারও সম্পাদক। আবুল কাসেম পৌর শহরের দিঘীরপাড় মধুরবাড়ির বাসিন্দা। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নেই।

মোজাম্মেল হক ও আশরাফুল হক আপন ভাই। এর মধ্যে মোজাম্মেল বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ দেড় মাস আগে তিনি বাংলাদেশ এসে কিছুদিন থেকে আবার সৌদি আরবে চলে যান। আশরাফুল হককে গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বড়বাড়ি বিল্ডার্স থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন মামলা হওয়ার পর তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।

বাদী বাবুল মিয়া সাংসদ আফজাল হোসেনের আত্মীয়। মামলা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্তরা সাংসদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে আপত্তিকর কথা লিখেছেন। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সে কারণে তিনি মামলা করেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, আফজাল হোসেন কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাংসদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মোজাম্মেল হক ও আশরাফুল হকের আপন বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোবারক হোসেন। মোবারক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সাংসদের অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নির্বাচনের কিছুদিন আগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে সাংসদের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দিন দিন দূরত্ব না কমে বাড়তে থাকে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাওয়ার পরও দলীয় মনোনয়ন পাননি মোবারক। শেষে সাংসদকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নৌকার প্রার্থীর কাছে হেরে যান। মোবারক ছিলেন বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর থেকে সাংসদের সঙ্গে মোবারক পরিবারের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় একটি পক্ষ সুযোগ পেলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংসদবিরোধী বিষয় পোস্ট করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সাংসদ ও তাঁর অনুগতরা বিব্রত ছিলেন। নেতা-কর্মীদের ধারণা, সুদূরপ্রসারী ভাবনা থেকে মামলাটি করা হয়েছে। এই মামলায় চারজনকে আসামি করা হলেও মূলত এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের কাছে বার্তা পৌঁছানো হলো।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার জাহান। তিনি মামলা দায়েরের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে সাংসদ আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি যা করিনি কিংবা যার ধারেকাছেও নেই, একটি পক্ষ তা নিয়ে ফেসবুকে লিখছে। এসবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে চাপ আসে। কিন্তু চাপকে আমলে না নিয়ে শুধু ধৈর্য ধরে আছি। এই অবস্থায় দলের এক নেতা মামলা করেছেন। আমি মনে করি আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার সবার আছে।’