এক কারাবন্দী নিয়ে দোটানা

শেখ জাহাঙ্গীর নামে মুক্তি পাওয়া এক কারাবন্দীকে নিয়ে দোটানায় পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ভারত বলছে, শেখ জাহাঙ্গীর ভারতের নাগরিক। তিনি ভারতের হুগলি জেলার ধনিয়াখালীর কালিকাপুরের বাসিন্দা। অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বলছে, জাহাঙ্গীর বিদেশি নন, বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁর বাড়ি যশোরর অভয়নগরের বেজিরডাঙ্গায়। দেশে তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।

কারাগার এখন মুক্তিপ্রাপ্ত এই বন্দীকে ভারতে ফেরত পাঠাবে, নাকি মুক্তি দেবে, তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। জাহাঙ্গীর আড়াই বছর ধরে যশোর কারাগারে। এর আগে ছয় মাস তিনি ময়মনসিংহ কারাগারে ছিলেন।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার অপরাধে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল জাহাঙ্গীরকে আটক করে ময়মনসিংহ রেলওয়ে পুলিশ। জাহাঙ্গীর তখন নিজেকে ভারতীয় নাগরিক দাবি করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালতে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেন। এরপর তাঁকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাবাস শেষ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরকে দেশে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালের ৩১ মে ময়মনসিংহ কারাগার থেকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। 

এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার জাহাঙ্গীরকে ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি দেয়। এ বিষয়ে ভারত তদন্ত করে জানতে পারে, জাহাঙ্গীর ভারতের নাগরিক, সেখানকার ভোটারও। গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাইকমিশন থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে বেনাপোল-পেট্রাপোল (হরিদাসপুর) দিয়ে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। 

এদিকে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পক্ষে কৌঁসুলি আবুল কাসেম ২ অক্টোবর ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আবেদন করে জানান, আসামি শেখ জাহাঙ্গীর একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা যশোরে। আসামি মানসিকভাবে দুর্বল হওয়ায় নাম–ঠিকানা ঠিকভাবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলতে পারেননি।

কৌঁসুলি আবুল কাসেমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি শেখ জাহাঙ্গীরের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং পরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আসামির পরিচয়পত্র সঠিক বলে জানায়। ফলে শেখ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশি নাগরিক বলে প্রমাণ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত জাহাঙ্গীরকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন এবং আদেশের অনুলিপি যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত এ বিষয়ে ব্লাস্টের প্রশংসা করেন।

এ অবস্থায় ওই বন্দীকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে ২ ডিসেম্বর কারা মহাপরিদর্শক এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। 

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব জানান, একই দিন তাঁরাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ই–মেইলে ভারতের নাগরিক বন্দী শেখ জাহাঙ্গীরকে স্বদেশ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি চিঠি পেয়েছেন। আবার এই বন্দীকে মুক্ত করার জন্য একটি জামিননামা ১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে পাওয়া যায়।

৩ ডিসেম্বর তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) সৈয়দ বেলাল হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ রায়ে উল্লেখিত ছাড়পত্র ইস্যুর আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। গত ৪ ডিসেম্বর আদালত আগের আদেশ বাতিল করে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত চলছে।’

এদিকে যশোরের অভয়নগর নির্বাচন কমিশন বলছে, আগের তদন্তে নির্বাচন কমিশন শেখ জাহাঙ্গীরকে বাংলাদেশের নাগরিক বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা যে তথ্য পেয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে তিনি ভারতীয় নাগরিক। বিশেষ করে তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন।

জানতে চাইলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামিন না পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য এসেও জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি যশোরের ভোটার। তাঁর স্ত্রী-সন্তানও এসেছিলেন। কারাগার থেকে যেই মুহূর্তে শেখ জাহাঙ্গীরকে জামিন দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি, সেই মুহূর্তে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাই, তাঁকে ভারতে প্রত্যাবাসনের।’