গ্যাস-সংযোগের কথা বলে ৪৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি

গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি। ছবি: সংগৃহীত

গ্যাস–সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঢাকার এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৪৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারক চক্র নিজেদের তিতাসের ঠিকাদার ও কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়েছিল ওই ব্যবসায়ীর কাছে।

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঘটনার পুরো রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) তাঁদের এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আকসাদুদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের তিতাসের ঠিকাদার ও কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়। ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আল মাসুদ নামের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কীভাবে সংঘবদ্ধ চক্রটির সদস্যরা এত টাকা হাতিয়ে নিলেন, সেই রহস্য জানার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামি হলেন চাঁদপুরের শ্রীরামপুর গ্রামের শাহাদাত খান (৪৫), মতিঝিল আরামবাগ এলাকার আফতাই উদ্দিন রাহাত (২৪), মানিকগঞ্জের বড় সওরন্ডি গ্রামের জাহিদুর রহমান (৪৩), কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিশবাগ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৫০) এবং পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হোসেন (৪০)। পলাতক তিন আসামি হলেন জাকির হোসেন (৪০), ইউনুছ মিয়া (৪০) ও আসলাম (৪০)।

তিতাসের ঠিকাদার ও কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ৩০ ডিসেম্বর আটজনের নাম উল্লেখ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন ব্যবসায়ী আল মাসুদ।

মামলায় আল মাসুদ দাবি করেন, ঢাকার সায়দাবাদ ও ফুলবাড়ী এলাকায় তাঁর দুটি রেস্তোরাঁ আছে। গত ৬ অক্টোবর আসামি শাহাদাত ও আফাতাই উদ্দিন সায়দাবাদ এলাকার রেস্তোরাঁয় আসেন। সেখানে দুজনই সেদিন তাঁর কাছে নিজেদের তিতাসের ঠিকাদার বলে পরিচয় দেন। ফুলবাড়ী এলাকার রেস্তোরাঁয় তিতাসের গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে জানান তাঁরা। বিনিময়ে তাঁদের দিতে হবে ৫০ লাখ টাকা। হোটেলে গ্যাস–সংযোগ পাওয়ার জন্য এই দুজনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি।

মামলায় আল মাসুদ আরও দাবি করেন, গত ৯ অক্টোবর গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রথমে তাঁর কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেন আসামি শাহাদাত। এরপর গত ১৯ অক্টোবর সায়দাবাদের রেস্তোরাঁয় আসেন অন্য আসামিরা। তখন তাঁরা নিজেদের কেউ কেউ তিতাসের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর কাছে চক্রটির সদস্যরা মোট ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন।

আল মাসুদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আসামি শাহাদাত তিতাস গ্যাস লিমিটেডের কাগজে টাকা বুঝিয়ে পাওয়ার রসিদও তাঁকে দেন। প্রথম দিকে তিনি বুঝতেই পারেননি যে আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। বুঝতে পারলেন তখন, যখন তিনি নিজে আসামিদের দেওয়া কাগজপত্রসহ তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরও জাল করে তাঁকে দেন আসামিরা।

সিআইডির আকসাদুদ জামান বলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের অন্যতম শাহাদাত হোসেন রাজধানীর দৈনিক বাংলা এলাকায় তালা-চাবির মিস্ত্রি হিসেবে একসময় কাজ করতেন বলে জানতে পেরেছেন। তাঁদের কেউই উচ্চশিক্ষিত নন। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।

হোটেল ব্যবসায়ী আল মাসুদকে দেওয়া প্রতারক চক্রের সব কাগজপত্র মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। আল মাসুদ যেসব চেকের মাধ্যমে টাকা দিয়েছিলেন, তা–ও জব্দ করা হয়েছে।


জব্দ করা কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফরম। গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আল মাসুদের নাম উল্লেখ করা আবেদন।

আল মাসুদ জানান, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।