ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাড়ি নিয়ে যা হলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ছবি: সংগৃহীত

সংগঠনের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলগুলোতে নেতা-কর্মীদের শাড়ি দিয়েছিল ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের জ্যেষ্ঠ এক নেত্রীর ‘অনুমতি’ না নিয়ে কনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের কয়েকটি শাড়ি বিতরণ করেছিলেন আরেক নেত্রী। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন হলের আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন।

এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাড়ি বিতরণ করা নেত্রীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

ঘটনার সূত্রপাত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (৪ জানুয়ারি) আগের রাতে গত শুক্রবার। জ্যেষ্ঠ নেত্রীর ‘অনুমতি’ ছাড়া শাড়ি বিতরণ নিয়ে সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ঘটনার জের ধরে গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় হলে গেলে ‘ছাত্রলীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক লেখার’ অভিযোগ তুলে আবাসিক শিক্ষক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের ওপর হামলা করেন হল শাখা ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা।

সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ওই ছাত্রী বমি করলেও তিনি তেমন গুরুতর আঘাত পাননি বলে জানিয়েছে হল প্রশাসন।

সূত্রমতে, যে জ্যেষ্ঠ নেত্রীর ‘অনুমতি’ না নিয়ে শাড়ি বিতরণ করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান ওরফে রাইন। আর শাড়ি বিতরণ করা নেত্রী হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও শাখা ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সালসাবিল রাবেয়া।

হলের ছাত্রীরা জানান, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের রাতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে নেতা-কর্মীদের শাড়ি বিতরণ করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান ও তাঁর অনুসারীরা। অনেককে শাড়ি দেওয়া হলেও ছয়জন শাড়ি না পেয়ে নিজেদের কক্ষে ফিরে যান। পরে সালসাবিল খান ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হলে দেওয়া শাড়ি থেকে ছয়টি শাড়ি ওই ছয়জনের কক্ষে গিয়ে দিয়ে আসেন। রওনককে না জানিয়ে ছয়জনকে শাড়ি দেওয়ায় তিনি (রওনক) ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে দুই পক্ষে সেদিন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

এরপর রোববার সন্ধ্যায় সালসাবিল খান নিজের কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, কক্ষের সব জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রওনকের অনুসারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানান সালসাবিল। এরপর সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে ওই ঘটনার প্রতিবাদে অনুসারীদের নিয়ে রওনকের কক্ষের দিকে যাচ্ছিলেন সালসাবিল। এ সময় রওনকের অনুসারীদের সঙ্গে সালসাবিলের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাধে। হল সংসদের শীর্ষ দুই নেত্রী তখন হলে না থাকায় তাঁদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে যান সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক রিয়া আক্তার। সালসাবিল ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে তাঁকেও মারধর করেন রওনকের অনুসারীরা। একপর্যায়ে তাঁরা সালসাবিলকে হল থেকে বহিষ্কারের দাবিও জানাতে থাকেন।

খবর পেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকিয়া পারভীনের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন ও তাহমিনা হক। তাঁরা সালসাবিল ও রিয়াকে হল থেকে বের করে আনতে গেলে ফটকের কাছে তাঁদের ওপর ফের হামলা চালান রওনকের অনুসারীরা। এ সময় ‘ছাত্রলীগের সমালোচনা করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির’ অভিযোগ তুলে আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীনের ওপরও হামলা করেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। তাঁর চুল টেনে ধরেন তাঁরা। এ সময় সালসাবিল ও রিয়াকে মারতে মারতে হল থেকে বের করে দেন রওনকের অনুসারীরা।

শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত করতে একপর্যায়ে আমি বলি যে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন ছাত্রলীগ নেত্রীরা আমার ওপর হামলা করেন। তাঁরা আমার চুল টেনে ধরেন। ওই পক্ষটির (রওনক) অভিযোগ হচ্ছে, হলের "পলিটিক্যাল ব্লকে" সাধারণ মেয়েরা (রিয়া আক্তারসহ অন্যরা) কেন গেল?’ এই ঘটনায় আজ সোমবার হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে তিনি জানান।

হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) রিকি হায়দার আশা বলেন, ‘হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহানের অনুসারীরা হলে এই অরাজক পরিস্থিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁরা দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না। তাঁদের এমন আচরণে আমরা হতাশ।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার দিবাগত রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সালসাবিল রাবেয়াকে সংগঠন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।