আরও শীত আসছে, বৃষ্টিতে বীজতলার ক্ষতি

অসময়ের বৃষ্টিতে শুয়ে পড়েছে পাকা ধান। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান উঠিয়ে দিতে কাজ করছেন এক কৃষাণী। গতকাল দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার সোনার বাংলা এলাকায়। ছবি: মোহাম্মদ রফিক
অসময়ের বৃষ্টিতে শুয়ে পড়েছে পাকা ধান। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান উঠিয়ে দিতে কাজ করছেন এক কৃষাণী। গতকাল দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার সোনার বাংলা এলাকায়। ছবি: মোহাম্মদ রফিক

দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আজ সোমবারের মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় এবং চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। কুয়াশা, শীত ও বৃষ্টির কারণে মাঠে থাকা বোরো ধানের বীজতলা, সবজি, সরিষা ও গমের অপরিণত চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আমন ধান কাটা হয়ে গেলেও বরিশাল বিভাগের অনেক স্থানে মাঠে আমন ধান রয়েছে। পেকে সোনালি হয়ে ওঠা এই ধান অকালবৃষ্টি ও ঘনকুয়াশায় জমিতেই ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় আমন চাষিরা বেশ বিপদে পড়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে দেওয়া পূর্বাভাসে মাঠে থাকা পাকা আমন ধান দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শীত–কুয়াশা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির এই সময়টায় ফসলের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ৮–৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের অনেক এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মৃদু বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, দেশের কয়েকটি জেলায় আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ দু-তিন দিন থাকতে পারে। এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

এদিকে গতকাল রোববার পৌষের অসময়ের বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলে আমনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি, খেসারি ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমনের পাকা ধান বৃষ্টিতে শুয়ে পড়ায় মাঠে কাদাজলে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এতে কৃষক ধান তুলতে পারলেও সেসব ধানের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফসলের মাঠে পানি জমতে পারেনি। তাই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।

বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শার্শি গ্রামের কৃষক খালেক মোল্লা (৪৫) বৃষ্টির সম্ভাবনায় কয়েক দিন আগেই ধান কাটা শুরু করেছিলেন। ধান কেটে খেতে স্তূপ করে রাখার পরই তা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।

খালেক মোল্লা বললেন, ফলন ভালো হলেও কাটার পর মাঠেই স্তূপ করে রাখা ধান বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। ১ একর ২০ শতক জমিতে আমন রোপণ করছিলেন তিনি। খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এখন ধানের যে অবস্থা, তাতে বিক্রি করে খরচ উঠবে কি না সন্দেহ আছে।

>

দেশের বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে কয়েক দিন।
তেঁতুলিয়ায় গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আজ থেকে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।

বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর সোনাখালী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, এমনিতেই বাজারে ধানের মূল্য কম। ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মণ ধান উৎপাদন করতে ৭৫০ টাকার ওপর ব্যয় হয়। তার ওপর শেষ সময়ে এসে এই অকালবৃষ্টি বিপদে ফেলে দিয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বোরো ধানের বীজতলা আস্তে আস্তে হলদে রং ধারণ করছে। বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এসব বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষক।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুলদী কেষ্টপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহীন শেখ জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে জমি থেকে পানি সরিয়েছেন। বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়েও ঢেকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও বীজ থেকে ঠিকমতো চারা গজাচ্ছে না। এখন বাজার থেকে বোরো ধানের চারা কিনে নতুন করে রোপণ করতে হবে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল রাজবাড়ী প্রতিনিধি)