১০ জানুয়ারি থেকে মির্জাপুরে দুই ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল, যাত্রীদের ক্ষোভ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বঙ্গবন্ধু সেতু রেল সংযোগ সড়কে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলকারী সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের মির্জাপুর রেলস্টেশনের যাত্রাবিরতি উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ খবরে মির্জাপুরবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেনের শিডিউল পুনরুদ্ধারের জন্য মির্জাপুরসহ কয়েকটি স্টেশনে ওই দুটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি থেকে দুটি ট্রেনেরই মির্জাপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৩ সালের জুন মাসে এই সড়কে রেল চলাচল শুরু হয়। একই বছরের ১৭ আগস্ট সুন্দরবন ও ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবরে চিত্রা এক্সপ্রেস নামে দুটি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা-খুলনার মধ্যে চলাচল শুরু করে। শুরু থেকেই দুটি ট্রেনের মির্জাপুর স্টেশনে স্টপেজ ছিল। এতে এলাকাবাসী, মির্জাপুরে বসবাসরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কুমুদিনী হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগী, ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী এবং মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকেরা সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন।

ট্রেন দুটির মধ্যে বর্তমানে সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছেড়ে এসে মির্জাপুরে ভোর ৩টা ৫৫ মিনিটে যাত্রাবিরতি করে ঢাকার উদ্দেশে ৩টা ৫৭ মিনিটে ছেড়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে মির্জাপুরে সকাল ৮টা ১১ মিনিটে যাত্রাবিরতি শেষে খুলনার উদ্দেশে ছাড়ে ৮টা ১৩ মিনিটে। আর চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছেড়ে মির্জাপুরে ২ মিনিটের যাত্রাবিরতি করে ঢাকার দিকে ছাড়ছে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে ছেড়ে ২ মিনিট যাত্রাবিরতি শেষে খুলনার উদ্দেশে ছাড়ছে রাত ৮টা ৩৯ মিনিটে। ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ যথাক্রমে বুধবার ও সোমবার।

এদিকে ট্রেন দুটি বন্ধের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। হতাশা প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার তালসার গ্রামের বাসিন্দা মো. আলামিন হোসেন বলেন, তিনি মির্জাপুরে ওষুধ কোম্পানি অ্যারিস্টোফার্মার মেডিকেল প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। বাসে যাতায়াত করতে তাঁকে ঝিনাইদহ থেকে নবীনগর নেমে তিনটি বাস পাল্টিয়ে মির্জাপুরে আসতে হতো। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে তিনি সব সময় ট্রেনেই যাতায়াত করেন। কিন্তু মির্জাপুরে ওই দুটি ট্রেনের স্টপেজ উঠিয়ে নিলে তিনি চরম দুর্ভোগে পড়বেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই। আমার এলাকার হাজার হাজার মানুষ গোড়াইতে মিলে কাজ করে। তাঁরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হবে।’

মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী হাবেল মৃধা বলেন, ‘ভোরে সুন্দরবনে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে নেমে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দোকানের মাল কিনে ট্রান্সপোর্টে দিয়ে আবার চিত্রা এক্সপ্রেসে মির্জাপুরে ফিরে আসতাম। ট্রেন থামা বন্ধ হলে আমাদের খুবই কষ্ট হবে। আমাদের ভোগান্তি বাড়বে। খরচও বেশি হবে।’

উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মির্জাপুরে অবশ্যই স্টপেজ রাখা উচিত।’

মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেখানে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মতো নামী প্রতিষ্ঠান আছে। গোড়াই শিল্পাঞ্চলে কর্মরত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশের যাতায়াতের ভরসা ট্রেন। কোথায় আরও আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি করা উচিত, সেখানে উল্টো দুটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হচ্ছে। এটি খুবই কষ্টের।’

মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র মো. সাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘খবরটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’

মির্জাপুর রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘ট্রেনের স্টপেজ রাখা না রাখা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়।’

মুঠোফোনে জানতে চাইলে রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি ট্রেনের শিডিউল বর্তমানে বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনগুলো যাতায়াত করছে। শিডিউল বিপর্যয় রোধে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর কয়েকটি স্থানে স্টপেজ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।