'ফাস্ট ট্র্যাকে' আটকে যাচ্ছে গতি

চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশে টোল প্লাজায় যানজটে আটকে আছে গাড়ি। গতকাল বিকেল চারটায়।  প্রথম আলো
চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশে টোল প্লাজায় যানজটে আটকে আছে গাড়ি। গতকাল বিকেল চারটায়। প্রথম আলো

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুতে টোল আদায় ও গাড়ি পারাপার দ্রুত করতে চালু হয়েছে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ পদ্ধতি। এখন এই ফাস্ট ট্র্যাকেই আটকে যাচ্ছে গতি। টোল প্লাজায় উভয় পাশে ছয়টির মধ্যে দুটি লেন ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতির জন্য সংরক্ষিত করে দেওয়ায় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন চালক ও যাত্রীরা। 

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতে ব্যবহার হয় কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত এই শাহ আমানত সেতু। প্রতিদিন চলাচল করে ছোট-বড় ৫০ হাজারের বেশি গাড়ি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, গত ২৭ অক্টোবর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগ্রাবাদ সড়ক ভবনে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। এরপর দীর্ঘ সময় পার হলেও টোল আদায়কারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চালকদের সচেতন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি চালু হলে শুরু হয় ভোগান্তি।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কোম্পানি ইউডিসি-ভ্যান জেভি শাহ আমানত সেতুর ইজারাদার হিসেবে ১ জানুয়ারি থেকে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতিতে টোল আদায় করছে। গত পাঁচ দিনে মাত্র ৩৪টি গাড়ি ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতিতে নিবন্ধন হয়েছে।

গতকাল রোববার বিকেলে সেতুর টোল প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, উভয় পাশের ছয় লেনের মধ্যে চারটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাকের দুটি লেন খালি। এ সময় বাকি চার লেনের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। 

বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত অবস্থান করে একটি গাড়িকেও ফাস্ট ট্র্যাক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কোনো গাড়িই ফাস্ট ট্র্যাক ব্যবহার করেনি।  

আনোয়ারাগামী একটি বাসের চালক আবদু শুক্কুর বলেন, হঠাৎ করে টোল আদায় পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেতুর টোল প্লাজা পার হতে সময় লাগছে আধা ঘণ্টার মতো।

পরিবারের নিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের ফেরার পথে যাত্রীবাহী একটি বাসের যাত্রী নজরুল ইসলাম (৩৪) বলেন, শহরের ঢোকার মুখে এভাবে আটকে থাকা মানে দুর্ভোগের চূড়ান্ত। 

টোল প্লাজার এই সমস্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও সরব এই সড়কে চলাচলকারীরা। বেসরকারি একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল আজিম ফেসবুকে লেখেন, ‘ডিজিটাল হলে ভোগান্তি কমে, কিন্তু এখানে টোল আদায় করতে গিয়ে ভোগান্তি বেড়ে গেল।’

সওজ জানায়, ফাস্ট ট্র্যাকের সংরক্ষিত লেন দিয়ে শুধু গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেটধারী এবং নিবন্ধিত গাড়িগুলো পার হতে পারবে। এসব গাড়ির গ্লাসে লাগানো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগের সঙ্গে টোল গেটের অ্যানটেনার সংকেতের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় হবে। এতে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে টোল দেওয়া ব্যক্তির মুঠোফোনে  আদায়ের খুদে বার্তা চলে যাবে।

 সূত্র আরও জানায়, এর আগে থেকে মেঘনা-গোমতি সেতুতে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি চালু আছে। শাহ আমানত সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও মালিকেরা পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন অবগত না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

 সওজ-এর চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘আমরা আরও দুইটা বুথ (লেন) বাড়ানোর চিন্তা করছি। ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি এখনো চালকের কাছে নতুন, তাই ঝামেলা মনে হচ্ছে। সব চালক নিবন্ধন করে নিলে আশা করি সহসা ভোগান্তি কমে আসবে।’ শাহ আমানত সেতুতে ইউডিসি-ভ্যান জেভির অপারেশন ডিরেক্টর অপূর্ব সাহা বলেন, চালকেরা ফাস্ট ট্র্যাকে চলে এলে ভোগান্তি কমে আসবে।