অসহায় বাবাকে সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছেন

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী মিশকাত হোসেন হত্যার তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন হয়। এতে অংশ নেন কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। পাবনার আবদুল হামিদ সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী মিশকাত হোসেন হত্যার তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন হয়। এতে অংশ নেন কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। পাবনার আবদুল হামিদ সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

‘আমি পেশায় শিক্ষক। আমার ছেলের ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হওয়ার। যদি সে সুযোগ না পায়, তাহলে আমার পেশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তার ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। ছেলের কোনো ইচ্ছাই পূরণ হয়নি। তার আগেই হত্যা করা হয়েছে তাকে। বিচার চেয়ে গত এক বছর সাংসদ, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কাছে গিয়েছি। সবাই সন্তান হারা অসহায় বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিচার নয়।’

বিচার না পাওয়ার হতাশায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের ছাত্র মিশকাত হোসেনের বাবা সৈয়দ গোলাম মোস্তফা। হত্যার ঘটনার এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও বিচার না পাওয়ার প্রতিবাদে গতকাল রোববার মানববন্ধন করেছেন পাবনা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মিশকাতের বাবা ওই কলেজের শিক্ষক। বেলা ১১টায় পাবনার আবদুল হামিদ সড়কে হওয়া ওই মানববন্ধনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন তিনি।

২০১৮ সালে ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় টিউশনি থেকে বাড়ি ফেরার পথে মিশকাতকে এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন কয়েকজন যুবক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরদিন মিশকাতের বাবা সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পুলিশ ইয়াসিন আলী নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। ইয়াসিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও চার আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তবে পুলিশ অভিযুক্ত দুই প্রধান আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে মিশকাতের বাবা অভিযোগপত্রটির ওপর নারাজি দিলে আদালত গত বছরের ২৬ জুন মামলাটি পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

মিশকাতদের বাড়ি জেলা শহরের শিবরামপুর মহল্লায়। তাঁরা দুই ভাই। গতকালের মানববন্ধনে অবিলম্বে মিশকাত হত্যা মামলার সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। 

বক্তারা বলেন, সন্তান হারালে একজন বাবা যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েন, তা মিশকাতের বাবাকে দেখলেই বোঝা যায়। নিরপরাধ মানুষ হত্যার সঠিক অভিযোগপত্র দিতেও পুলিশের এমন অবহেলা মেনে নেওয়ার মতো নয়। এখন আশা পিবিআই সঠিক তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেবে। 

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পাবনা কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) সবুজ আলী প্রথম আলোকে বলেন, পালাতক থাকা এক আসামিকে গ্রেপ্তারের পরেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।