নামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নেই কোনো অবকাঠামো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে নামে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিরও কোনো অবকাঠামো নেই। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিপরীতে একজন করে চিকিৎসক যোগদান করলেও অবকাঠামো না থাকায় ওই চিকিৎসকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে রোগী দেখছেন। এতে তৃণমূলের লোকজন হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোপীনাথপুর, দামোদরপুর, রামনাথপুর, বিষ্ণুপুর, মধুপুর ও লোহানীপাড়া ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল ওই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে তৃণমূল মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু ২০০৯ সালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো কাগজে-কলমে খোলা হলেও বাস্তবে এখন পর্যন্ত একটিরও অবকাঠামো নির্মাণ বা জায়গা নির্ধারণ করা হয়নি।

তবু ওই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বিপরীতে গত ১২ ডিসেম্বর একজন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সহকারী সার্জন সাকির মুসাব্বির গোপীনাথপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, মাহমুদুল আলম দামোদরপুরে, সৈয়দা সিরাজুম মাহমুদা রামনাথপুরে, এইচ এম সানাউল হক বিষ্ণুপুরে, মাসুমা আক্তার মধুপুরে এবং শারমীন আকতার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ পেয়েছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক এইচ এম সানাউল হক ও মাহমুদুল আলম রোগী দেখছেন। কাগজে-কলমে চিকিৎসক এইচ এম সানাউল হকের নিয়োগ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং মাহমুদুল আলমের দামোদরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হওয়ায় ইউনিয়নে বসেই তাঁদের রোগী দেখার কথা। কিন্তু ওই দুই ইউনিয়নের রোগীদের সেবা পেতে আসতে হয় উপজেলা সদরে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা তো আগে থেকে চালু ছিলই। এরপরও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র করাই হয় শুধু হাতের কাছে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে। ইউনিয়নের জন্য চিকিৎসক নিয়োগের আলাদা করে কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না ইউনিয়নবাসী। নিজ ইউনিয়নের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার মতো করে।

জানতে চাইলে মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু বসব কোথায়? এখন পর্যন্ত সরকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে দেয়নি।’ একই কথা বলেন চিকিৎসক এইচ এম সানাউল হকও।

দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ইউনিয়নে চিকিৎসক থেকেও নেই। তাঁরা রোগী দেখছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষকে হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সরকারের যে মহৎ পরিকল্পনা, তা ভেস্তে যাচ্ছে। তৃণমূলের মানুষকে চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে ব্যয় বাড়ছে, সময়ও নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকার এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে আগে থেকেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দও রয়েছে। কিন্তু ওই কেন্দ্রগুলোতে কোনো চিকিৎসক নেই। একটির অবকাঠামো নেই, চিকিৎসক আছে। আরেকটির চিকিৎসক নেই, আছে অবকাঠামো। এখন সরকার যদি একটা আদেশ দেয়, তাহলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রগুলোতে বসতে পারতেন। এতে তৃণমূলের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হতো। এতে করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রগুলোতে গতিশীলতাও ফিরে আসবে।