আগাম আলুতে কৃষকের হাসি

>
দেশি পাকড়ি আলু
এবারের দাম : ১২০০ টাকা
গতবারের দাম : ৬০০ টাকা

গ্র্যানুলা, অ্যাসটরিক, কার্ডিনাল
এবারের দাম : ৯০০ টাকা
গতবারের দাম : ৫০০ টাকা

আগাম আলু চাষ করে ভালো লাভ পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের। গত তিন বছরের তুলনায় এবার আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

গতকাল রোববার মহাস্থান হাটে দেশি জাতের পাকড়ি আলু প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ এবং গ্র্যানুলা, অ্যাসটরিক ও কার্ডিনাল জাতের আলু প্রতি মণ ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর এ সময়ে মহাস্থান হাটে প্রতি মণ দেশি পাকড়ি আলুর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ এবং গ্র্যানুলা ও কার্ডিনাল জাতের আলু বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা মণ দরে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার আগাম আলুর দাম প্রায় দ্বিগুণ। 

ওই হাটে ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর বর্ষাকালে সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় বাজারে আমদানি ছিল তুলনামূলক কম। ফলে সবজির দাম চড়া ছিল। এ কারণে লাভের আশায় আগাম আলু চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আলুর দাম চড়া। এক মাস ধরে মহাস্থান হাটে নতুন আলুর প্রচুর আমদানি হচ্ছে। শুরুতে প্রতি মণ নতুন দেশি পাকড়ি ও গ্র্যানুলা আলু পাইকারি পর্যায়ে ৬ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। হাটে আলুর আমদানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করে। তবে দুই সপ্তাহ ধরে মহাস্থান হাটে প্রতি মণ পাকড়ি আলু ১ হাজার ২০০ এবং ক্যারেজ, গ্র্যানুলা ও অ্যাসটরিক ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাষিরা বলেন, খেতে আলুবীজ রোপণের পর বৃষ্টিসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়েছে। এতে আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে কম। অপর দিকে এবার আগাম আলুর গায়ে কোনো দাগ নেই বললেই চলে। বাজারে আলুর চাহিদার কোনো কমতি নেই। হাটে আলু বিক্রি করতে আসা রায় মাঝিড়া গ্রামের কৃষক ইদরিস আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে গড়ে ১৫ হাজার টাকা। এবার বিঘায় পাকড়ি জাতের আলুর ফলন গড়ে ৪০ মণ। এক বিঘা জমির এই আলু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে বিঘায় লাভ গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। গত মৌসুমে বাজারমূল্য কম থাকায় আগাম আলু চাষ করে খরচও ওঠেনি। 

দক্ষিণভাগ গ্রামের আলুচাষি আবু হোসেন বলেন, তিনি ১০ মণ দেশি গুটি আলু এবং ১০ মণ গ্র্যানুলা জাতের আলু বিক্রির জন্য এনেছেন। দেশি গুটি আলু প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ এবং গ্র্যানুলা আলু প্রতি মণ ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বাজার ভালো থাকলে এবার চার বিঘা জমিতে তাঁর লাভ হবে দেড় লাখ টাকা। 

গড় মহাস্থান গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী হাটে পাঁচ মণ গ্র্যানুলা জাতের আলু বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গতবার এ আলু হাটে লিয়ে আসে ৪০০ টেকা দরেও ব্যাচপার পারিনি। এবার ব্যাচিচ্চি ১ হাজার ২০০ টেকা। গতবার পাঁচ বিঘা জমিনত আলু আবাদ করবার য্যায়া ২৫ হাজার টেকা লোকসান দিচি। এবার পাঁচ বিঘাত জমিনের আলু ব্যাচে লাভ হবি দেড় লাখ টেকা।’

গড় মহাস্থান গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী বলেন, ‘এবার ধানে লোকসান, মুলাতে লোকসান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষেও লোকসান। লাভ শুধু আগাম জাতের আলু চাষে।’ 

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বর্ষাকালে সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় এবার শীতকালীন সবজির সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। সবজির জোগানে ঘাটতির কারণে চাহিদা বেড়েছে আলুর। ফলে আলুর বাজারে এবার চাঙাভাব বিরাজ করছে।

আলুর পাইকারি ব্যাপারী শহিদুল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় চাষ হওয়া আগাম জাতের আলু ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হচ্ছে। এসব মোকামে অন্য জেলা থেকে একসময় আলু যেত। এবার আলু যাচ্ছে মহাস্থানবাজার থেকে। পাইকারি মোকামে আলুর চাহিদা থাকায় এবার বাজার চাঙা। আলু ছাড়াও মহাস্থান হাটে প্রতি মণ ফুলকপি রোববার ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত মৌসুমে ফুলকপি বিক্রি হয়েছে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে। 

হাটে সবজি বিক্রি করতে যাওয়া চলনাগাতি গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, খেত থেকে ১১ মণ ফুলকপি তুলে এনে তিনি ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। গত বছর এই হাটে প্রতি মণ ফুলকপি বিক্রি হয়েছে গড়ে ২০০ টাকা মণ দরে। 

মহাস্থান হাটে গড়ে দুই কেজি ওজনের বাঁধাকপি প্রতিটি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত মৌসুমে এই বাঁধাকপির দাম ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা। মহাস্থান হাটে শিম প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা দরে। গত মৌসুমে প্রতি মণ শিমের দাম ছিল ৪০০ টাকা। মহাস্থান হাটে প্রতি মণ পেঁপে ও বেগুন গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা মণ দরে। গতবার এই দুটি সবজির দাম ছিল প্রতি মণ ২০০ টাকা। প্রতি মণ মুলা বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা দরে। উৎপাদন, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরিসহ মণপ্রতি মুলা চাষে খরচ পড়ে ৩২০ টাকার ওপরে। চাষিরা জানান, এক মাস আগে এ হাটে প্রতি মণ মুলা ৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। 

মহাস্থান হাটের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত মৌসুমের চেয়ে আগাম আলুর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেশি। হাটে শীতকালীন সবজির সরবরাহে ঘাটতির কারণে আলুর চাহিদা বেড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়ার উপপরিচালক আবুল কাশেম মো. আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, এ মৌসুমে জেলায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। আগাম আলু চাষ খুব লাভজনক। প্রত্যাশিত ফলন ও দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।