চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: নষ্ট ফগার মেশিন নিয়ে বিপত্তি

সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কার্যালয় ভবনে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফগার মেশিন। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কার্যালয় ভবনে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফগার মেশিন। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। এই সময়ে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১১টি ফগার মেশিন। এর মধ্যে চারটি মাত্র চার মাস আগে এবং সাতটি তিন বছর আগে কিনেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। অন্য মেশিনগুলোও ব্যবহারের সময় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে মশকনিধন কার্যক্রমে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা জানান, ফগার মেশিন দিয়ে পূর্ণবয়স্ক বা উড়ন্ত মশা নিধনের ওষুধ অ্যাডাল্টিসাইড ছিটানো হয়। নষ্ট মেশিনগুলো রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জে সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কার্যালয় ভবনে।

নতুন কেনা এসব মেশিন নষ্ট হওয়া নিয়ে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেছে। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, টানা ১০-১৫ মিনিট ওষুধ ছিটানোর পর যন্ত্রগুলোতে বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর ওষুধ ছিটানো কঠিন হয়ে পড়ে। মেশিনগুলোর গুণগত মানে সমস্যার কারণে এই জটিলতা হতে পারে। তবে প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখার দাবি, অনেক ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের অজ্ঞতার কারণে মেশিন নষ্ট হতে পারে। আবার মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।

মেশিনগুলোর মেরামত ব্যয় যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কারিগর নেই বলে জানান পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব মেশিন অন্তত পাঁচ বছর ভালোভাবে কাজ করার কথা বলে জানান প্রকৌশলীরা। করপোরেশনে বর্তমানে ১০০টি ফগার মেশিন রয়েছে। 

সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর তাঁর ওয়ার্ডে একটি ফগার মেশিন দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন চালানোর পর মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। কয়েকবার ঠিক করেছিলেন। কিছুদিন আগে একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন একটা দিয়েছে। সেটি দিয়ে কাজ চলছে। 

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করপোরেশনে একসময় মাত্র ১০টি ফগার মেশিন ছিল। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দফায় ৯০টি ফগার মেশিন কেনা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ মেশিনারি টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৫০টি মেশিন কেনে পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কেনা এসব মেশিনের প্রতিটির দাম পড়ে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এতে মোট ব্যয় হয় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এসব মেশিন ছিল জার্মানির তৈরি। এর মধ্যে সাতটি নষ্ট হয়ে গেছে।

গত বছর (২০১৯) মাঝামাঝি সময়ে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে নতুন করে ফগার মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। এবার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিবর্তে ক্রয় শাখা থেকে ৪০টি ফগার মেশিন কেনা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি প্রতিটি মেশিন কেনা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায়। মোট ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে নষ্ট হয়েছে চারটি। 

করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক প্রথম আলোকে বলেন, আগের ৫০টি মেশিন কিনেছে পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। তাঁরা সম্প্রতি ৪০টি মেশিন কিনেছেন। এসব মেশিনের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে এমনিতেই মেশিনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। হয়তো এ ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে।

সুদীপ বসাক দাবি করেন, পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কাছ থেকে মেশিনে ত্রুটি থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তা দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচটি মেশিন ঠিক করে দিয়েছেন তাঁরা।

গত বছরের শেষের দিকে ডেঙ্গুর উপদ্রব কিছুটা কমে এলে সিটি করপোরেশনের মশকনিধনের তৎপরতাও কমে যায়। পূর্ণবয়স্ক মশা মারার ওষুধ অ্যাডাল্টিসাইড ছিটানোর কার্যক্রম এক মাস ধরে একপ্রকার বন্ধ ছিল। এতে নগরজুড়ে মশার উৎপাত বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনুরোধে ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবার ওষুধ ছিটানো শুরু করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই ফগার মেশিনগুলো নষ্ট থাকায় কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে।

ফগার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ার বিষয়টি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে অবহিত করা হবে বলে জানান উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পর্যাপ্ত মেশিন থাকলেও কিছু মেশিন বারবার নষ্ট হচ্ছে। এতে ঠিকমতো ওষুধ ছিটানো যাচ্ছে না। তাঁর মতে, অনেক সময় টানা ১০-১৫ মিনিট ওষুধ ছিটালে কোনো কোনো মেশিন কাজ করে না। অনেক ক্ষেত্রে মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তা–ও ঠিক করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে মশকনিধনে প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাচ্ছে না।