বিএনপি বলছে ইভিএম ভোট চুরির প্রক্রিয়া, ইসি বলছে সুযোগ নেই

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, এটি নীরবে, নিঃশব্দে ভোট চুরি করার প্রক্রিয়া। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। ইভিএমে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো পরিকল্পনাও তাদের নেই।

দুই সিটি নির্বাচন সামনে রেখে আজ সোমবার দুই মেয়র প্রার্থীসহ বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিজেদের বিভিন্ন আশঙ্কার কথা তুলে ধরে বিএনপি।

বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি, ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। অন্যদিকে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে ছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ইসি সচিব মো. আলমগীর।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ইভিএমে ভোটের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ২০১৪ সালে একবার ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। এবার নতুন পদ্ধতি ইভিএমের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা হচ্ছে। এই ইভিএম নীরব, নির্দেশিত, নিঃশব্দ, স্বয়ংক্রিয় ভোট চুরির প্রকল্প ছাড়া আর কিছু নয়। ইভিএমের প্রোগ্রামিংয়ের ওপর ফলাফল নির্ভর করছে। ভোটের ফলাফল নিয়ন্ত্রিত হবে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে। ইসি ইভিএমের পক্ষে যেসব যুক্তি দিয়েছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

আমীর খসরু বলেন, তাঁরা ইসিকে বলেছেন, বিএনপি–সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজন প্রার্থী আপিল করতে গেলে তাঁকে অপহরণ করা হয়, আজ মুন্সিগঞ্জে তাঁকে পাওয়া যায়। আরেকজন নারী প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। ভয়ভীতি দেখানোর মাধ্যমে নির্বাচন কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি আশ্বস্ত করেছে, ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ঘটনা না ঘটলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। পুলিশের অভিযান হবে না।

বিএনপির সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ২১ দফা লিখিত দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে আছে নির্বাচনের সময় পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার থেকে বিরত থাকা, রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান স্থগিত রাখা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্বে নিরাপত্তা সেল করা, পোলিং এজেন্টদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

বৈঠক শেষে সিইসি কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে বিএনপি আপত্তি করেছে। তাঁরা বিএনপির নেতাদের বুঝিয়েছেন, ইভিএম নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ইভিএমে ভোট নেওয়া হলে যার ভোট তিনি দিতে পারবেন। এখানে ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।

সিইসি বলেন, দেশে দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনগুলোয় যে অনিয়মগুলো হয়, যেমন: বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে গিয়ে ব্যালট ভরে আবার কেন্দ্রে রেখে দেওয়া, ব্যালট বক্স পানিতে ফেলে দেওয়া, আগুনে পুড়িয়ে ফেলা দেওয়া—সেসব থেকে বেরিয়ে আসতে ইসি ইভিএমে ভোট নিতে চায়। ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেন না। একজন একবারের বেশি ভোট দিতে পারবে না।


সিইসি বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, ইভিএমে নীরবে কারচুপি হওয়ার সুযোগ নেই। এর আগে আমরা সংসদ নির্বাচন করেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছি, সেখানে কারচুপির অভিযোগ আসেনি। ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএমে প্রোগ্রামিং করার কোনো সুযোগ নেই। প্রোগ্রামিং ইসির হাতে থাকবে। এটা অনলাইন নয়, অফলাইন সিস্টেম। এখানে হ্যাকিংয়ের কোনো সুযোগ নেই।

সিইসি বলেন, পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে কঠোরভাবে বলে দেওয়া হবে প্রার্থী ও সমর্থকদের ৩০ জানুয়ারির আগে কোনো ধরনের নিষ্প্রয়োজনে হয়রানি করা যাবে না। তার মানে এই নয়, কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আর যদি আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তখন আদেশের বিরুদ্ধে পুলিশ অবস্থান নিতে পারে না।