কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু তুলে বিক্রি
কপোতাক্ষ নদের মধ্যে পুকুর কেটে সেখানে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুরের সোহেল সরদারের বিরুদ্ধে ওই বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সোহেল সরদার প্রভাবশালী হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে তিনি বালু উঠিয়ে বিক্রি করলেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
এভাবেই বালু উত্তোলন করায় নদের তলদেশ ফাঁকা হচ্ছে। ফলে আশপাশের ঘরবাড়ি ও জমিজমা ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোহেল সরদার কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সরদার মাসুদ রানার ভাই হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সোহেল মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোটচাঁদপুর সীমানার মধ্য থেকে বালু উঠিয়ে মহেশপুর সীমানার একটি গ্রামে রেখে বিক্রি করছেন। আর এ জন্য নদের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত পাইপ বসানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যশোরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদটির কিছু অংশ ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। নদটি মহেশপুর উপজেলার পুরন্দপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালিশপুর বাজার পার করে মহেশপুর শহরে প্রবেশ করেছে। আবার মহেশপুর শহর পেরিয়ে বৈচিতলা হয়ে আবারও শহরের আরেক পাশ দিয়ে বয়ে আজমপুর পেরিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলায় প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে চৌগাছার তাহেরপুর হয়ে যশোরের কেশবপুরে মিলেছে। এই নদের কোটচাঁদপুর অংশের সলেমানপুর এলাকায় বিশাল আকৃতির পুকুর কাটা হয়েছে। সেখানে খননযন্ত্র বসিয়ে ওই বালু ওঠানো হচ্ছে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কপোতাক্ষ নদের কোটচাঁদপুরের একটি স্থান থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু ওঠানো হচ্ছে। যে স্থান থেকে বালু ওঠানো হচ্ছে, সেটি কোটচাঁদপুরের সলেমানপুর, আর নদের ওপারে রয়েছে মহেশপুর উপজেলার আলামপুর গ্রাম। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, উপজেলার সলেমানপুর গ্রামের প্রভাবশালী সরদার পরিবারের সদস্য সোহেল সরদার। এ জন্য তিনি নদের মধ্যে পুকুর তৈরি করেছেন। সেই পুকুরের মধ্যে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু ওঠাচ্ছেন। এই বালু পাইপের সাহায্যে নদ পেরিয়ে মহেশপুরের আলামপুরে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে শত শত গাড়ি (ট্রলি) বালু বিক্রি করা হচ্ছে। গত তিন থেকে চার মাস এভাবে বালু ওঠানো হচ্ছে। এভাবে বালু ওঠানোর কারণে নদের তলদেশ ফাঁকা হচ্ছে। ফলে নদের আশপাশের ঘরবাড়ি ও জমিজমা ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদের পাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, শুধু সোহেল নন, সলেমানপুরের অনেক মানুষ নদের জায়গা দখল করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোহেল সরদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুরটি নদের জায়গায় নয়, আমার জায়গায়। আর আমি বালু ওঠাচ্ছি পুকুরটি খননের জন্য। এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে আমার পুকুরটি খনন হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি বালু বিক্রি করে কিছু পয়সাও পাচ্ছি।’এভাবে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু ওঠালে সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল জানান, পুকুর খননের জন্য সামান্য বালু ওঠানোর কারণে কোনো সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজনিন সুলতানা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।