সব আছে, নেই শুধু শিক্ষক
রাঙামাটির অগৈয়াছড়ি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়ায় ২০১২ সালে নির্মিত হয় নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন। দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় আসবাবও। কিন্তু সরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
রাঙামাটির সদর উপজেলা মগবান ইউনিয়নে এই এলাকাটি। যাতায়াতের মাধ্যম হাঁটাপথ কিংবা নৌকা। এই দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পঞ্চম শ্রেণির পর ঝরে পড়ার হার বাড়ছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় (এসইএসডিপি) এই নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১২ সালে শেষ হয় নির্মাণকাজ। ১ একর ৫০ শতক জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণের ব্যয় হয় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণ শেষে প্রতিটি কক্ষে আসবাব, সোলার সিস্টেম ও পানি সরবরাহ লাইনও স্থাপন করা হয়। রয়েছে ১২ কক্ষসহ শিক্ষক মিলনায়তন ও শৌচাগার।
বিদ্যালয়টি নির্মাণের পর ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এরপর ২০১৩ সালে তিন শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৩৫ শিক্ষার্থী। বিনা বেতনে পাঠ দেন তিনজন শিক্ষক। একপর্যায়ে তাঁরা চলে গেলে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি বন্ধ রাখা হয়। প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে ২০১৬ সালে আবার চালু হয়। সেই বছর ৪৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে আবার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে এসে গ্রামবাসী আবার বিদ্যালয় চালু করে। ভর্তি হয় ৩৩ জন। ২০১৯ সালে এসে তা কমে এখন মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। একজন শিক্ষক বিনা বেতনে অনিয়মিতভাবে পাঠদান করেন।
স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাতটি গ্রামে চার শতাধিক পরিবার রয়েছে। প্রাথমিক স্তরের পর অর্থের অভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। গ্রামের মানুষ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের হওয়ায় রাঙামাটি শহরে পাঠিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছেন না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা বিদ্যালয় ভবনটি পরিচ্ছন্ন। শ্রেণিকক্ষে আসবাব, ফ্যান, লাইট সবই আছে।
অগৈয়াছড়ি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া গ্রামের অভিভাবক সিদু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ পরিবার তাঁদের সন্তানদের টাকার অভাবে পড়ালেখা করাতে পারছেন না। ফলে সন্তানদের দৈনিক মজুরি ও চাষের কাজে লাগাচ্ছেন। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হলে সেখানে পড়ার সুযোগ পেত সন্তানেরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, কথা ছিল সরকারিভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়া হবে। কিন্তু আট বছরেও শিক্ষক দেওয়া হলো না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি ২০১৫ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আমাদের করার কিছুই নেই। চাইলে প্রধান শিক্ষক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি দিতে পারে। তবে তাঁরা বেতন পাবেন না। কারণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিদ্যালয়টি ভবিষ্যৎ কী হবে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।’