গ্রামে নিরাপদ পানির জন্য ৬ লাখ নলকূপ বসবে

এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা। ছবি: বাসস
এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা। ছবি: বাসস

সমগ্র দেশের গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৬ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ নামে একটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে দেশের পল্লি এলাকায় নলকূপ বসানো হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় নিরাপদ পানির এই প্রকল্পসহ মোট সাতটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্রিফ করেন।

মন্ত্রী জানান, সাত প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১১ হাজার ৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর পুরোটাই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপদ পানির উৎস স্থাপনের লক্ষে ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি জানান।

প্রকল্পের আওতায় ৯০ হাজার ৬৩৬টি অগভীর নলকূপ, ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৭টি গভীর নলকূপ, ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি সাবমার্সিবল পাম্প, জলাধারসহ গভীর সাবমার্সিবল পাম্প ১ লাখ ৭০ হাজার ২২২টি, রিংওয়েল ৩ হাজার ৩৭৯টি, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ইউনিট ৩ হাজার ২১০টি, রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৪৯১টি, সোলার পিএসএফ ৩২০টি, আর্সেনিক আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট (ব্যাসেল টাইপ) ২৯ হাজার ৫৭০টি এবং কমিউনিটি ভিত্তিক পানি সরবরাহ ইউনিট ৮ হাজার ৮৩৮টি বসানো হবে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৫৬ হাজার ৭১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে,যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তখন মোট খরচের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৬৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

মান্নান বলেন, ‘সরকার এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত নয়, কারণ গত অর্থবছরে তুলনায় এ বছর বেশি টাকার এডিপি আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশের যেকোনো সেতুর গোড়া বা এর আশাপাশ থেকে বালু তোলা বন্ধে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে কঠোর তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, যেসব পুরোনো জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজ অপসারণ করা হবে, সেগুলো ফেলে না রেখে নিলামে বিক্রি করে দিতে হবে।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো সিংড়া-গুরুদাসপুর-চাটমোহর সড়কের সিংড়া অংশে বাঁধ উঁচুকরণ, পেভমেন্ট নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প, এতে খরচ হবে ১৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ হবে ১৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষায় নদী তীরে স্থায়ী রক্ষাবাঁধ কাজ। এই প্রকল্পে খরচ হবে ২৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি সেতু এবং আরসিসি সেতু প্রতিস্থাপন (ঢাকা জোন) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বরিশাল স্থাপন’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় হবে ৪১২ কোটি টাকা এবং নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

একনেক সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়কসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।