দুদককে সহযোগিতা করতে চাইলেন শেখ মারুফ

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। ছবি: প্রথম আলো
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। আজ মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শেখ ফজলুর রহমান মারুফ দুদক কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আপনাদেরই একজন। দুদকের কর্মকর্তারা কিছু তথ্যের জন্য আমাকে ডেকেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা বলেছি। আমার আর কিছু বলার নেই। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।’

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে শেখ ফজলুর রহমান মারুফকে আজ বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের একটি দল। এর আগে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর তাঁকে তলব করে নোটিশ পাঠান।

গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ‘শুদ্ধি অভিযান’–এর সময় থেকে দুদক অবৈধ সম্পদের যে অনুসন্ধান শুরু করেছে, সে তালিকায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের ছোট ভাই শেখ মারুফের নাম আছে। তিনি যুবলীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়নি।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়ংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কার করা হয়) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই–বাছাই করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এর মধ্যে ১৯টি মামলা করে দুদক দল। জি কে শামীম, খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তাঁর ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হয়।