টাকার লোভে শাহনাজকে হত্যা করেছিলেন ভ্যানচালক

টাকার লোভে ফরিদপুরের মধুখালীতে শাহনাজ পারভিন লিপিকে (৩৫) হত্যা করছিলেন তাঁকে নিয়মিত বহনকারী ভ্যানচালক শৌখিন (২২)। শৌখিনকে এ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন হাসান (২৪) ও ১৪ বছরের এক কিশোর। হত্যাকাণ্ডের পর নগদ টাকা, সোনার অলংকার ও মুঠোফোন তাঁরা ভাগ করে নেন।

শাহনাজ চন্দনা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

ভ্যানচালকের সঙ্গে সখ্যের সূত্র ধরে এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কিশোর ভ্যানচালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে এসব তথ্য জানায় বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম জানান। এই কিশোর আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুরের শিশু আদালতের বিচারিক হাকিম ফারুক হোসেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় বাগাট বাজার এনজিও কার্যালয়ের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বের হন শাহনাজ। অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছাতে তাঁর ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু সারা রাতেও তিনি বাড়ি পৌঁছাননি। বাড়িতে না ফেরায় তাঁর স্বামী শহিদুল ইসলাম স্ত্রীর দুটি মুঠোফোনে ফোন করেন। তিনি দুটি মুঠোফোনই বন্ধ পান। পরের দিন সকালে পুলিশ উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া ও মুন্সিপাড়া গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি আখখেতের পাশ থেকে তাঁর মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। তাঁর মাথা ও কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহত শাহনাজের ভাই মো. অহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুখালী থানায় হত্যা মামলা করেন।

মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, শাহনাজ কাজ শেষে প্রতি রাতেই স্থানীয় শৌখিন নামের এক ভ্যানচালকের ভ্যানে বাড়ি ফিরতেন। প্রতিদিনই মোটা অঙ্কের টাকা সঙ্গে নিয়ে আসতেন। এই টাকার প্রতি নজর পড়ে শৌখিনের। এ কারণে শৌখিন তাঁর আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে শাহনাজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শাহনাজ অফিস থেকে শৌখিনের ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শৌখিনের বন্ধু হাসান ও ওই কিশোর পথরোধ করে ভ্যানে ওঠে। কিছু দূর যাওয়ার পর কাঠের লাঠি দিয়ে শৌখিন পেছন থেকে শাহনাজের মাথায় আঘাত করেন। এতে শাহনাজ ভ্যান থেকে নিচে পড়ে যান। পরে হাসান শাহনাজকে আঘাত করলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা শাহনাজকে আখখেতে নিয়ে যান এবং শাহনাজের জামা–কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর দুর্বৃত্তরা শাহনাজের আঙুলে থাকা কয়েকটি আংটি খুলে নেন। এ ছাড়া দুটি মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা নিয়ে লাশটি ফেলে পালিয়ে যান। হাসান ও কিশোরের বাড়ি বাগাট দক্ষিণপাড়ায় এবং শৌখিনের বাড়ি বাগাট মুন্সীপাড়ায়।

কিশোরের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যানুসারে বাগাট দক্ষিণপাড়ায় হাসানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে নগদ ১২ হাজার টাকা ও নিহত শাহনাজের আংটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাসানের একটি প্যান্টও উদ্ধার করা হয়। প্যান্টটিতে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় হাসানের পরনে এই প্যান্টটি ছিল।

পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ওই কিশোর ফরিদপুরের শিশু আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া হাসানের বাবা ঠান্ডু মিয়া ও মা লাকী বেগম এ হত্যাকাণ্ডে ছেলের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।