অপরাধীদের সমভাবে আইন-আমলে আনা হচ্ছে: দুদক চেয়ারম্যান

সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে অক্সফাম বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ছবি: দুদকের সৌজন্যে।
সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে অক্সফাম বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ছবি: দুদকের সৌজন্যে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুদক নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছে। বিগত চার বছরে বর্তমান কমিশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে হয়তো এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অপরাধীদের সমভাবে আইন-আমলে আনা হচ্ছে।

অক্সফাম বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কথাগুলো বলেন দুদক চেয়ারম্যান। আজ মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে এ মতবিনিময় হয়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কমিশনের দৃঢ় কার্যক্রমের পরও স্বস্তির অবকাশ নেই। আমাদের দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে।’ ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, দুদক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি ঘটার আগেই বাধা দিচ্ছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। জনগণকে সচেতন করছে এবং সর্বশেষ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত করে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন প্রতিদিন গড়ে ১৫টি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। দুদক চেয়ারম্যানের মতে, দুর্নীতি বন্ধ কিংবা সুশাসনের জন্য মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। তিনি বলেন, পরিণত মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করা কঠিন। তাই কমিশন তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতা প্রস্ফুটিত করার জন্য বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ প্রসঙ্গে ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, এ বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশের সব উপজেলা, জেলা, নগর ও মহানগরে সততা সংঘ রয়েছে—এমন ২৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একযোগে সুশাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। কারণ, বিতর্কের মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান আইন, প্রথা ও রীতিনীতিকে পরিশুদ্ধ করা যায়। গণতান্ত্রিক মানসিকতা তথা পরমত সহিষ্ণুতা বিকাশে বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু বিতর্ক প্রতিযোগিতা নয়, এর পাশাপাশি বছরব্যাপী দেশের সর্বত্র রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ গ্রথিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ সময় অক্সফাম বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি কমিশনের এসব কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়নে পরিণত করতে হলে দুর্নীতি নির্মূল করতেই হবে। সরকারি পরিষেবা প্রদানে শুধু তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হয়রানি-অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, মেশিনের পেছনে যিনি আছেন, তিনিও মানুষ। তাই প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারি সেবা প্রদান প্রক্রিয়াও পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে।

অক্সফাম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান অক্সফাম বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদকের প্রতিরোধ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, উত্তম কুমার মণ্ডল প্রমুখ।