হলফনামায় তথ্য: বাড়ি-গাড়ি নেই 'ক্যাসিনো সাঈদের'

মমিনুল হক সাঈদ ও ফারহানা আহম্মেদ
মমিনুল হক সাঈদ ও ফারহানা আহম্মেদ
>হলফনামার তথ্য। সাঈদের হাতে নগদ আছে মাত্র ৭১ হাজার ৮৬১ টাকা। স্বর্ণ আছে ৬০ তোলা।

কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন ‘ক্যাসিনো সাঈদ’, তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর হাতে আছে (নগদ) মাত্র ৭১ হাজার ৮৬১ টাকা। তবে তাঁর চেয়ে অন্তত ছয় গুণ বেশি নগদ টাকা রয়েছে স্ত্রী ফারহানা আহ্ম্মেদের (বৈশাখী) কাছে। ফারহানাও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৭০২ টাকা। সাঈদের নিজের বা স্ত্রীর নামে কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়ি, এমনকি গাড়িও নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবার প্রার্থী হয়েছেন এই দম্পতি। এর আগে ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনেও এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হন এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে তাঁর নাম আলোচনায় আসে। ঢাকার বিভিন্ন খেলার ক্লাবে যাঁরা ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে অবৈধ আয় করতেন, তার মধ্যে তিনি অন্যতম বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য অভিযান শুরুর সময় দেশের বাইরে ছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে গোপনে দেশে ফেরেন তিনি। এর আগে গত অক্টোবরে তাঁকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

নির্বাচনী হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা রয়েছে ক্যাসিনো সাঈদের। পাঁচ বছর আগে ব্যাংক বা আর্থিক খাতে তাঁর নামে কোনো টাকা জমানো ছিল না। ২০১৫ সাল এবং এবারের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তাঁর ব্যবসায়িক (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৈশাখী এন্টারপ্রাইজ) মূলধন বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার ১৮৮ টাকা। ২০১৫ সালে ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯০১ টাকা। তাঁর বাৎসরিক আয় বেড়ে হয়েছে ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আগের হলফনামায় বার্ষিক আয় ছিল ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬ টাকা।

হলফনামা অনুযায়ী, সাঈদ ‘স্বাক্ষরজ্ঞান’সম্পন্ন। পেশা ঠিকাদারি। তাঁর স্ত্রী ফারহানা আহ্ম্মেদও স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। ফারহানার পেশা বুটিক ব্যবসা। ব্যবসা ও অন্যান্য খাত থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ৪ লাখ টাকা। ফারহানার নামে কোনো মামলা নেই। তবে সাঈদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। দুটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। দুদকের মামলার তদন্ত চলছে। তাঁর স্থাবর কোনো সম্পদ নেই।

২০১৫ সালে সাঈদের কাছে ২ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড ছিল, পাঁচ বছর পরেও সেটি একই আছে। তখনো তাঁর ৩ লাখ টাকার আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল, এখনো তা-ই আছে। স্বর্ণ আছে মাত্র ৬০ তোলা। ব্যাংকে এই প্রার্থীর কোনো ঋণ নেই।

গত নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাঈদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে, তাতে বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা এবং অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকা অর্জন করেছেন তিনি।

হলফনামা অনুযায়ী, সাঈদের স্ত্রী ফারহানার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে জমানো আছে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৫ টাকা। ২ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড ও ৩ লাখ টাকার আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মালিক তিনি। নিজস্ব কোনো গাড়িও নেই। তবে ৫০ ভরি স্বর্ণ আছে।

বিতর্কিত ময়নুল হক
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর গত অক্টোবরে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ডিএসসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক ওরফে মঞ্জু। তিনি এবারও একই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার এই খাতে আয় দেখিয়েছেন তিনি। এই খাত থেকে তিনি বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও তাঁর স্ত্রী ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন।

ময়নুল হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। স্বশিক্ষিত এই প্রার্থী ২০১৫ সালের হলফনামায় পেশা উল্লেখ করেছিলেন, রাজধানী সুপার মার্কেটের একটি দোকানে তৈরি পোশাকের ব্যবসা। নগদ ৩ লাখ টাকা ছাড়া তখন অস্থাবর কোনো সম্পদ ছিল না তাঁর। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল তিনটি দোকান ও একটি ফ্ল্যাট। এখন কারাগারে থাকা এই প্রার্থীর হাতে নগদ কোনো টাকা নেই। আর তাঁর স্ত্রীর হাতে আছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা।