প্রযুক্তিসচেতন হচ্ছেন গুরুদাসপুরে নারীরা

বিউটি খাতুনের দুই ছেলে। একজন গ্রামে থাকেন, অন্যজন দুবাইয়ে। প্রবাসী ছেলের সঙ্গে এত দিন মুঠোফোনে কথা হতো। মুঠোফোনে ভিডিও কলে ছেলের ছবি দেখা যাবে, এমনটা তাঁর ধারণাতেই ছিল না। ‘তথ্য আপা’র উঠান বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে পেরে রীতিমতো অবাক হয়েছিলেন বিউটি। ছেলের কণ্ঠ শোনার পাশাপাশি তাঁকে দেখতেও পাবেন!

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চলনবিল–অধ্যুষিত যোগেন্দ্রনগর গ্রামে বিউটি খাতুনের বাড়ি। বিউটির মতো উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের তিন হাজারের বেশি নারী তথ্যপ্রযুক্তিতে সচেতন হয়ে উঠছেন। ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তির বাইরেও এসব নারীকে বাল্যবিবাহ ও মাদকের কুফল, কিশোর ও বয়ঃসন্ধিকালে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসচেতনতা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফ্রিল্যান্সিংসহ প্রযুক্তির ব্যবহার, বিনা মূল্যে সরকারি-বেসরকারি সুবিধা পেতে করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ‘তথ্য আপা’র কার্যক্রমের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে এমন তথ্য জানা গেছে। উপজেলা পরিষদের খোলা জায়গায় পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের ৫০ জন নারীকে নিয়ে ওই উঠান বৈঠকের আয়োজন করে ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প’।

এই উঠান বৈঠকে নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সাংসদ মো. আবদুল কুদ্দুস প্রধান অতিথি ছিলেন। আরও ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাল শেখ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আকতার, তথ্য আপা মোছা. সালমা খাতুন প্রমুখ।

তথ্যসেবা প্রকল্পের কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের সংগ্রহ করে উঠান বৈঠক শুরু করেন তিনি। প্রতি মাসে ৯০০ জন নারীকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়। সেখান থেকে বাছাই করে ৫০ জনের একটি দলকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলা হয়। ইতিমধ্যে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন শেষ করে এখন পৌরসভায় চলছে এ কার্যক্রম। গত এক বছরে তিন হাজারের বেশি নারীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আসমা খাতুন বলেন, এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, নারী নির্যাতন, যৌতুকের কুফল, বাল্যবিবাহ, স্বাস্থ্যসচেতনতা, জঙ্গিবাদ ও নাগরিক অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়েছেন।

সাংসদ বলেন, দেশে নারীর সংখ্যা বেশি। নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে তাঁদের এগিয়ে নিতে সরকার দেশজুড়ে এমন কার্যক্রম শুরু করেছে, যাতে গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীরা আইনি সহায়তা, নারী অধিকার সম্পর্কে জানা ও নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ইন্টারনেট সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পাশাপাশি বহু অজানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতেই এ প্রকল্প কাজ করছে। এসব নারীর জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির ছোঁয়া দিতে তথ্য আপাদের অবিরাম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের ছোটখাটো হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁদের সেবা ও সেবার লক্ষ্য–উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমই প্রযুক্তির আলো ছড়ানোর কাজ আরও সহজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।