দার্জিলিং কমলা চাষে রফিকুলের সাফল্য

নিজের কমলাবাগানে রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
নিজের কমলাবাগানে রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

নাম দার্জেলিং কমলা। গাছে গাছে ঝুলে আছে এই হলুদ কমলা। খেতেও বেশ সুস্বাদু। সমতলভূমিতে এই কমলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ঝিনাইদহের কৃষক রফিকুল ইসলাম। কমলা বিক্রি করে আয়–রোজগারও ভালো হচ্ছে।

ঝিনাইদহের মহেশপুরে অনেকেই রফিকুল ইসলামের কমলার বাগান দেখতে আসছেন। অনেকে তাঁর সাফল্য দেখে কমলা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে কমলা গাছের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। আর রফিকুল তাঁদের সহায়তা করার কথা জানাচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের আইনুদ্দীন মণ্ডলের ছেলে। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে রফিকুল দ্বিতীয়। তিনি ২০০২ সাল থেকে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ২০১৬ থেকে কমলার চাষ শুরু করেন।

নার্সারির ব্যবসা করলেও রফিকুল ইসলামের আয় তেমন ছিল না। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কষ্টেই দিন চলত। ২০১৫ সালে তিনি দুই বিঘা জমি ইজারা নিয়ে মাল্টা চাষ করেন। সেটাও খুব একটা ভালো হয়নি। পরের বছর ২০১৬ সালে চার বিঘা জমিতে তিনি কমলার চাষ করেন। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে চারা রোপণ করেন। গত বছর আগস্ট থেকে কমলা বিক্রি শুরু করেছেন।

সম্প্রতি চাপাতলা গ্রামে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কমলা চাষের শুরুর কথা শোনান তিনি। রফিকুল বলেন, ‘মাল্টা চাষ করার সময় মনে হয়, এভাবে কমলার চাষ করা সম্ভব কি না? ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ভারত বেড়াতে যাই। সেখানে গিয়ে কমলার খেত দেখি এবং সেখানকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করি। সেখান থেকে ২০০টি কমলার চারা নিয়ে আসি। চারা রোপণের তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে গাছে কমলা আসতে শুরু করে। আগস্ট থেকে বিক্রি করছি। আগামী মার্চের দিকে আবারও নতুন ফল ধরবে।’

রফিকুল ইসলাম জানান, চার বিঘা জমিতে তাঁর ফলের বাগান। ৭৫০টি পেয়ারা, ৫০০টি মাল্টার পাশাপাশি ১৮০টি কমলার চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে ৬০টি কমলার চারা নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে রয়েছে ১২০টি গাছ। পেয়ারার গাছ থেকে ১০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। একই সময় ৬ লাখ টাকার মাল্টা আর ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। এখনো গাছে প্রায় দেড় লাখ টাকার কমলা আছে। এ ছাড়া এখান থেকে কলমপদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকার। ইতিমধ্যে পেয়ারার গাছগুলো কেটে দিয়েছেন। কমলাগাছে এখনো ফল রয়েছে। আর এই চাষের জন্য চারা রোপণের পর থেকে তিন বছরে চারা ক্রয়, রোপণ, বেড়া দেওয়া, পরিচর্যাসহ তার ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম আরও জানান, কমলার বাগান করতে তেমন কষ্ট করতে হয় না। তবে জমির চারপাশে ভালো করে বেড়া তৈরি করতে হয়। ৩ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। গাছে ফল এলে ভোমরা–মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেলে বাড়তি নজরদারি করতে হয়।

চলতি বছর আরও পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কমলা চাষ করছেন রফিকুল। কমলা চাষের সফলতা দেখে এলাকার অনেক কৃষকও তাঁর কাছ থেকে কমলার চারা কিনছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘রফিকুলের বাগানের কমলার স্বাদ ভালো। আমরা চেষ্টা করছি সম্ভাবনাময় এই কমলার চাষকে সম্প্রসারণ করতে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’